অবহেলা শেষে

1 1 0
                                    

রাহুল তিনবার ফোন করার পরেও দিয়া ফোন তুলছে না দেখে সে ভাবলো, একবার শেষ চেষ্টা করা যাক। Network এর সমস্যা ও হতে পারে। চারবার ফোন করার পর ওপার থেকে শোনা গেল, "আমার শরীর খারাপ। পরে কথা বলবো।" রাহুল "রেষ্ট নে" বলেই কেটে দিল, কিন্তু তার মনটা কেমন বিষিয়ে গেল। কয়েকদিন থেকেই দিয়া নিজে থেকে তাকে আর ফোন করে না। ফোন করলে শরীর খারাপ বা ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। রাহুল ভাবে ঠিক এক বছর আগের কথা, যখন Tinder থেকে তাদের আলাপ হয়েছিল। তখন দুজন দুজনকে প্রমিস করেছিল ওরা যে Long distance relationship কেই একদিন পরিপূর্ণ করে তুলবে। চলছিল ও সব ঠিকঠাক, কিন্তু এই কয়েকদিন থেকে কেমন যেন সব গন্ডগোল হয়ে যায়। দিয়া আর ফোন করেনা, কথা বলে না। আগে যেখানে তাদের দু-তিন ঘন্টা ভিডিও কলে কথা হত, সেখানে এখন সামান্য ফোন কলে আর এক মিনিট ও কথা হয় না।

রাহুল ভাবে সে হয়ত বেশি ভাবছে, দিয়ার শরীর খারাপ বলেই সে এমন করছে। আবার ভাবে কিন্তু এটা বেশ কয়েকদিনের ঘটনা। দিয়া তো জানে যে তার সাথে কথা না বললে রাহুলের ঘুম আসে না রাত্রে, তাও এরকম?

রাহুল ভাবে দিয়াকে আর ফোনে ডিস্টার্ব না করে, অন্য কিছু করবে। ভাবতে বসলো কি করা যায়। অবশেষে তার মাথায় একটা আইডিয়া এল। সে শুধু দিয়াকে একটা মেসেজ এ বলল, "একবার কষ্ট করে উঠে গিয়ে দরজায় দেখিস।"

ওদিকে দিয়ার ঘুম ভাঙে কলিং বেলের আওয়াজে। সে উঠে গিয়ে দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায়। ওপারের লোকটি বলে "ম্যাডাম আপনার একটা পার্সেল।" দিয়া খুব চমকে গিয়ে বলে "পার্সেল? আমার? কিন্তু আমি তো কিছু অর্ডার করিনি।" লোকটা বলে "দেখুন ম্যাডাম আপনারই আড্রেস এ এসেছে।" দিয়া দেখলো হ্যা, এটা তারই পার্সেল। তারপর ডেলিভারি চার্জ এর কথা বলতেই লোকটা বলল "সব পেড ম্যাডাম।" দিয়া দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে এসে পার্সেল টা খুলতে যাবে, ঠিক ওইসময় আবার কলিং বেল। সে উঠে গিয়ে দেখে Zomato থেকে আবার একটা অর্ডার। দিয়া বলে "এটা আমার আড্রেস এ এসেছে? আমি তো কিছ.... " Zomato delivery boy তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে "হ্যা ম্যাডাম, কাল একটা offer ছিল আমাদের, আপনাকে হয়ত কোনো বন্ধু পাঠিয়েছে।" দিয়া সেটা receive করে ঘরে এসে বসলো। তার বুঝতে বাকি থাকলো না যে এগুলো কার কাজ। ফোন খুলে দেখে একটা আনসিন মেসেজ "একবার কষ্ট করে উঠে গিয়ে দরজায় দেখিস"। দিয়া রাহুলকে ফোন করতেই রাহুল বলে " কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?"

দিয়া বলে "আমি সত্যিই ভাবিনি যে আমার শরীর খারাপ বলে তুই এতকিছু করবি। কিন্তু এগুলো কি পাঠয়েছিস?" রাহুল তাকে খুলে দেখতে বলে পার্সেল গুলো। প্রথম পার্সেল থেকে বেরোয় একটা টিউলিপ ফুলের Bouquet। সেটা দেখে লাফিয়ে ওঠে দিয়া, ওর খুব পছন্দের ফুল টিউলিপ। আর অন্য পার্সেল খুলে দেখে চিকেন ডিমসাম। দিয়া বলে "তুই আমায় ডিমসাম পাঠিয়েছিস?" রাহুল বলে, "আমার মনে আছে তুই একদিন বলেছিলি যে শরীর খারাপের সময় তোর ডিমসাম খেতে ভালো লাগে। যদিও সেটা মাটন, কিন্তু এদের অর্ডার লিস্টে মাটন না পেয়ে আমি চিকেন টাই অর্ডার করে দিলাম। তুই খুশি হয়েছিস তো?"

দিয়া বলে "খুব খুব খুব খুশি।"

রাহুল ওকে বলে, "তোর শরীর খারাপের কথা শুনে আমি ভাবছিলাম তুই হয়ত আমায় ignore করছিস। কিন্তু তারপরেই মনে হল এটা করা যেতে পারে।"

দিয়া বলে, "না রে, আমার সত্যিই শরীরটা ঠিক ছিল না। কিন্তু এসব দেখে শরীর ভালো না হলেও, মন ভালো হয়ে গেল।

রাহুল বলে, " তাহলে ভিডিও কল কর, আমি দেখি কেমন মন ভালো হল তোর। আর দেরি করিস না, এবার না খেলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।"

দিয়া ভিডিও কলে রাহুলের কথা বলতে বলতে লাঞ্চ সারে।

রাহুল বলে, "কখনো যদি বিরক্তিকর হয়ে উঠি, অবহেলা শেষে ডাক দিস, আবারো বলবো তোকেই ভালোবাসি।"

~HAWAII~Where stories live. Discover now