কালার প্যালেটটা তুলে নিয়ে আরিয়ান নিজের মনেই আস্তে আস্তে বিড়বিড় করতে লাগল "চোখের জন্য প্রুশিয়ান ব্লু দেব? নাকি আল্ট্রামেরিন ব্লু দেব?" পিছন থেকে ইরা এসে ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
কোনো কাজ না থাকলে আরিয়ান একটু রঙ তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে বসে, আজ ও তেমনই কাজের চাপ না থাকায় সে সকাল সকাল রঙ তুলি নিয়ে বসে পড়েছে। ইরা এতক্ষন ঘরেই ছিল, ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় তার। তাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আরিয়ানের কাছে এসে দেখে যে প্রায় পুরো ছবিটাই এঁকে ফেলেছে যার টের টিও পাইনি ইরা। শুধু চোখের মনি দুটো বাকি। ইরা জিজ্ঞেস করে, "তুই সকাল সকাল আমার মন ভালো করে দিলি! কি সুন্দর হয়েছে ছবিটা। তুই তো আমাকে আরও সুন্দর করে দিলি।" আরিয়ান যে ইরার ছবি এত মন দিয়ে আঁকছিল, সেটা তার পছন্দ হয়েছে দেখে খুশি হল। তারপর ইরার কথার উত্তরে বলল, "পারলাম কই তোকে তোর মতো সুন্দর করে আঁকতে! এই ছবির চেয়ে আরও অনেক বেশি সুন্দর তুই।" ইরা হেসে ফেলে।
আরিয়ান আরও বলে, "মানুষের মতো সৌন্দর্য যদি ছবি বহন করতে পারত, তাহলে কি আর মানুষের এত দাম থাকত?"
ইরা বলে, "কিন্তু চিত্রকারের মনের রঙে যদি কোনো ছবি পুর্নতা পায়, সেটা তো পরোক্ষভাবে মানুষেরই সৌন্দর্য, তাই নয় কি আরিয়ান? তুই যে এত সুন্দর করে আমায় ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুললি, এতে আমার চেয়েও তোর সৌন্দর্য বেশি প্রকাশ পাচ্ছে।"
আরিয়ান হেসে বলে, "সত্যি তোর সাথে কথায় পারা যায় না।" তারপর ইরা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে বলে, "আচ্ছা, চোখের মনিতে কি রঙ দিবি তুই?" আরিয়ান বলে, "চোখের মনির রঙ ঠিক করতেই যে পাগল হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা তুই একবার দেখ তো, এটা ভালো করে দেখ, কোন রংটা ঠিক মানাবে তোর ওই নীল চোখের জন্য?" কালার প্যালেটটা আরিয়ান এগিয়ে ধরল। ইরা খুব সন্তর্পনে একটা আঙুল দিয়ে দেখাল একটা নীলের উপর। আরিয়ান তুলিতে রঙ তুলে নিয়ে ভরাট করে ছবিতে ইরার চোখে। করতে করতে বলে, "আমিও ভাবছিলাম আল্ট্রামেরিন ব্লু টাই দেব, জানিস! কিন্তু সিয়র হতে পারছিলাম না।" ইরা তাকে বলে, "আচ্ছা, তাড়াতাড়ি ছবি শেষ করে টেবিলে এসে বস, আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিয়ে আসছি। অনেক বেলা হল।" সমস্ত ছবিটা আঁকা শেষ করে ক্যানভাসটা তুলে নিয়ে আরিয়ান রেখে আসে তাদের বেডরুমে। রঙ তুলি গুছিয়ে রেখে দেয় ড্রয়ারে। তারপর হাত মুখ ধুয়ে কিচেনে যেতেই বুকটা স্তব্ধ হয়ে যায় তার। ঠিক কি কারনে তার এমন হল বুঝতে পারেনা আরিয়ান। দু-বছর আগের ইরাকে হারানোর সেই চেনা শোক তাকে এমন স্তব্ধ করল? নাকি কল্পনার জগতে ইরাকে এতক্ষন কাছে পেয়ে তারপর হারিয়ে ফেলার শোক তাকে স্তব্ধ করল? ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা আরিয়ান কিছুই। বুকের ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠতে থাকে।
সেই পুরোনো শোক, ইরার শূন্যস্থান, সব কিছু মিলিয়ে যেন এই বিশ্ব তার উপরেই শুধু নির্মম অত্যাচার করে গেছে, এবং এখনো করে যাচ্ছে। কোনো রঙ তুলির ক্ষমতা নেই তাকে আর ইরাকে কল্পনাতে কথা বলানোর, দেখা করানোর। প্রতিবারই এমন এক শোক এসে তাকে স্তব্ধ করে দেয় একইভাবে, ঠিক দু-বছর আগের মতো। ক্যানভাসের সমস্ত রঙও বেরঙিন হয়ে যায় নিমেষে।
-শিল্পা প্রামানিক
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.