লক্ষ্মী পুজো

5 1 0
                                    

রাত্রি আট-টা বাজে। অফিস থেকে ফিরে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে ফোনটা নিয়ে সবে বসলাম। এসেই দেখি মায়ের ফোন। বিগত দুই বছর থেকে আমার চাকরির সূত্রে ক্যালিফোর্নিয়া আসার পরেই এই কাজটা একটা ডেইলি রুটিনে পড়ে গেছে। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে বাড়িতে ফোনে কথা বলা। তবে এত তাড়াতাড়ি মা কখনো ফোন করে না। এখানে রাত্রি আটটা মানে ভারতে সকাল সাতটা। তাই তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম, আমি "হ্যালো" বলতেই মা এর গলা শুনলাম, "বাবু! এখনো দুদিন দিন বাকি লক্ষ্মী পুজোর, আসতে পারিস কিনা দেখ না একটু। দুর্গাপুজোয় তো আসতে পারলি না।" কথাটা শুনে বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো হয় বহু বছর ধরেই, আর তার জন্য জোগাড় জানতি শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই। কিন্তু বিদেশে আসার পর আমার আর বাড়ির পুজোয় থাকা হয় না। মা কে বললাম, "বোঝোই তো মা, এখানে ইন্ডিয়ান ফেস্টিভ্যাল এর জন্য কোনো হলিডে থাকে না। কিকরে যাই বল তো! ছুটি নেই যে অফিসে।" মা শুধু বলল, "তুই পুজোর নাড়ু খেতে কত ভালোবাসিস! তোকে ছাড়া এ বছর ও আমরা পুজো কাটাবো?" আমি শুধু বললাম, "যদি ঠাকুর চায়, তাহলে আমি নাড়ু খেতে পারব মা। তুমি চিন্তা কোরো না। আর তো এক মাস পরেই বাড়ি যাবো। আমাদের কালী পুজো আর এখানের হ্যালোউইন। তখন না হয় আমায় আবার নাড়ু বানিয়ে খাইয়ে দিও।" ফোন কাটার পর ফেসবুক খুলে পুরোনো ছবি গুলো দেখছি, ঠিক দুই বছর আগের ছবি। যখন আমি বাড়িতে ছিলাম, বাড়ির সবার সাথে পুজো কাটিয়েছিলাম। কত সুন্দর সাজানো ছিল দিন গুলো।ছবিতে মত্ত থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই শুনলাম ডোর-বেল বাজলো। প্রথমে একটু অবাকই হলাম কারন এখানে সাধারণত কেউ ডোর-বেল বাজায় না। ডেলিভারি এলেও দরজার বাইরে রেখে চলে যায়। এসব ভাবতে ভাবতে গেলাম। দরজা খুলে দেখি এক বয়স্ক মহিলা আর তার ছেলের বয়সি একজন। আমাকে দেখেই বললেন, "নমস্কার, আমরা পাশের এই এপার্টমেন্ট এ নতুন এসেছি।" বিদেশের মাটিতে বাংলা শুনে কি যে ভালো লাগে। আমি ওনাদের ঘরে এনে বসালাম। কথায় কথায় বয়স্ক মহিলাটি বললেন, "দুদিন পর তো লক্ষ্মী পুজো, তুমিও তো আমার ছেলের বয়সি, তাই ভাবলাম তোমাকেও নিমন্ত্রন করে যাই। আলাপ ও হয়ে যাবে আর আমি খুব খুশি হব তুমি আমাদের ঘরে এলে।" প্রথমে কথাটা শুনে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে বললাম, "আপনি এখানে লক্ষ্মী পুজো করবেন মাসিমা?" উনি বললেন, "হ্যা, সেজন্যই তো তোমায় বলতে এলাম। চলে আসবে কিন্তু। পুজো দেখবে, প্রসাদ খাবে। খুব আনন্দ করবো। হয়ত দেশের মতো করতে পারব না কিন্তু চেষ্টা করব।"আমি বললাম, "নিস্চয় যাবো মাসিমা। পুজো দেখব, প্রসাদ খাবো।"ওনারা উঠে গেলে আমি মা কে ফোন করলাম। আমার আর খুশি ধরছিল না। ফোন করেই বললাম, "মা! আমি তোমায় বললাম না যে ঠাকুর চাইলে আমি পুজো দেখতে পারব। ঠাকুর চেয়েছেন মা, আমি লক্ষ্মী পুজোর নিমন্ত্রন পেয়েছি বিদেশে।"মা সব শুনে বলল, "সবই ঠাকুরের ইচ্ছে। তুই না আসার কষ্টটা কম হল একটু। হয়ত আমরা কাছে থাকতে পারব না, তবে পুজো তো দেখতে পারবি। ভালো করে পুজো কাটাস ওনাদের বাড়িতে।"কেমন একটা অদ্ভুত আনন্দ ছেয়ে গেল মনে।

~HAWAII~Where stories live. Discover now