স্বভাব মতোই আরাত্রিকা রাত্রে ঘুমোনোর আগে আয়নায় নিজেকে দেখে। ও জানে না কেন এটা করে কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় যেন কিভাবে। দিনের শেষে নিজেকে একটা সান্ত্বনা দেওয়ার মতো, "নিজের জন্য নিজে আছি"। ঘরের এক দেওয়ালে লাগানো ছোটো আয়নাটাই সঙ্গী আরাত্রিকার সুখ দুঃখের। খুব কষ্টের দিনে যেমন সে তার সাথে কেঁদেছে, তেমনই খুব আনন্দের দিনেও সে তার সাথে হেসেছে। তাই দিনের শুরু আর শেষটা আরাত্রিকার এই আয়না দিয়েই হয়। তার জীবনের খুব গোপন কিছু, সেই সমস্ত কথা জানে আয়নাটা। ঠিক একজন মানুষের মতোই কথা বলে আরাত্রিকা তার সাথে প্রতিদিন। কিন্তু সেদিন রাত্রে ক্লান্ত থাকার কারনে সে আয়নাকে এক ঝলক দেখেই ঘুমিয়ে পড়ে।
রাত্রে খুব ভালো ঘুম হয়না, বার বার আচমকা ঘুম ভাঙে, আরাত্রিকা বুঝতে পারে যে তাকে এক নেশায় পেয়েছে। সে যদি আজ তার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা না বলে, আজও তাকে ঘুমোতে দেবে না সে। কেমন যেন দিশেহারা হয়ে ঘরের অন্ধকারের মধ্যেই আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আরাত্রিকা। ঝাপসা চোখেই এক হাত বাড়িয়ে দেয় আয়নার দিকে। ছুঁয়ে দেখে তার প্রতিচ্ছবি কে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তার হাত আটকে যায় কাঁচে। সে চাইলেও ছাড়তে পারছে না আয়নাটাকে। অন্য হাতে চোখ রগড়ে সেই ঘোলাটে অন্ধকারের মধ্যেই সে দেখতে চেষ্টা করে নিজের মুখ। কিন্তু সে নিজের সাথে কোনো মিল পায়না তার প্রতিচ্ছবির। খুব হিংস্র ভাবে তাকিয়ে আছে সে আরাত্রিকার দিকে, চোখে মুখে ক্ষোভ, রাগ, যন্ত্রনা সব যেন ফুটে উঠেছে একসাথে, তার মধ্যে তার চোখে আছে প্রতিশোধের আগুন। তার হাত আয়নার প্রতিচ্ছবির সেই অগ্নি চোখের দিকে চলে যায়....সে খুব রুগ্ন ভাবে বলে "প্রতিদিনের সঙ্গীকে ভুলে যাওয়ার স্পর্ধা এখানেই শেষ করবে তোকে, আরাত্রিকা।" আরাত্রিকার সারা শরীর যেন অবস হয়ে আসে, সে দাড়াতে পারে না আর।।
সকালের প্রথম আলো চোখে পড়তেই বিছানা থেকে তারাতাড়ি উঠে বসে আরাত্রিকা। কিছুক্ষন সময় তার নিজেকে গুছিয়ে নিতে যায়, তারপর বলে "কি ভয়ানক স্বপ্ন ছিল।" তারপর প্রতিদিনের মতোই সে নিজের সারাদিনের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু স্বপ্নের কথা ভোলে না। রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কেমন যেন ভয় করতে থাকে তার। আজ তার আয়নার সাথে কথা বলবে সে, কিন্তু রাত্রের স্বপ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সত্যি কি ঠিক হবে তার আয়নার সামনে দাঁড়ানো? আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে সে বিছানায় এসে হেলান দিয়ে বসে, কিন্তু শোয় না। ক্লান্ত শরীরটাকে দেওয়ালের দিকে এলিয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এইভাবেই কখন যেন হঠাৎ চোখ লেগে যায়, বুঝতে পারেনি আরাত্রিকা। তারপর আবার আচমকা ঘুম ভাঙে। কিন্তু এবার সত্যিই আর কোনো ভয় থাকে না তার। গুটি গুটি পায়ে আয়নার দিকে এগিয়ে গিয়ে অন্ধকারেই সে দাঁড়ায় তার সামনে। জমকালো অন্ধকার আর বাইরের শিরশিরে হাওয়া যেন ঘরটাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। তারপর কেমন নেশার চোখে দেখতে পায় আয়নার প্রতিচ্ছবির সেই আরাত্রিকার চোখে মুখে রক্তের দাগ, তার চোখ, গাল, ঠোঁট যেন অজস্র কাটায় রক্তাক্ত হয়ে আছে। আর সেই প্রতিশোধ নিতে সে চায়ছে আরাত্রিকার উপর। আরাত্রিকার সেই প্রতিচ্ছবি দেখে হাতের সবচেয়ে কাছে থাকা ফলের ঝুরির ছুরি দিয়ে সে আয়নায় খুব নৃশংস ভাবে বারবার আঁচড় মারতে থাকে। কাঁচের মধ্যে ছুরির কাটার দাগের তীব্র শব্দে আসক্ত হয়ে যায় আরাত্রিকা। শেষ বারের মতো একটা আঁচর কেটেই সে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে যায়।।
আবার সকালের প্রথম আলোর ছটায় ঘুম থেকে উঠে কোনো কূল কিনারা খুজে পায়না সে, এরকম কেন তার সাথে হচ্ছে? সে কি মানসিক ভাবে অসুস্থ? চোখ মুখ ছুয়ে দেখতে যাওয়ার পর টের পায় তার হাতের সেই ছুরিটা মুঠো অবস্থায় ধরা। আরাত্রিকা বসেই দেখার চেষ্টা করে আয়নাটাকে, সেখানে কোনো দাগ নেই। অক্ষত আছে তার আয়না। ছুরি টাকে ফেলে দিয়ে সে তারাতাড়ি নিজে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
রাত্রের সেই প্রতিচ্ছবির মতোই আরাত্রিকা দেখতে পায় তার মুখে রক্তের দাগ, তার চোখ, গাল, ঠোঁট অজস্র কাটায় রক্তাক্ত হয়ে আছে। মেঝেতে পড়ে থাকে সারারাতের সাক্ষী ছুরিটা, রক্তের আবছা দাগ নিয়ে।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasiStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
