মিঠি, ভালো নাম আরাত্রিকা। কলেজে 1st semester এর ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই Human Psychology নিয়ে খুব আগ্রহ মিঠির। তাই সে ভর্তি ও হয়েছে Psychology নিয়েই। মানুষের মন, তার রূপ জানার মধ্যে একটা গা ছমছমে ব্যাপার আছে, এটাই উপভোগ করে সে। সত্যিই তো, এই যে আমাদের মন, কখনো খুশি থাকে, কখনো দুঃখে, কখনো অসুখেও ভোগে। কখনো শান্ত, কখনো চঞ্চল। মিঠির মতে, মানুষের মনের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই।
ভাবনার সাগরে ডুবে খেয়াল হয় তার, কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে। পা চালায় সে, কিন্তু হঠাৎ মনে হয়, কেউ যেন তার সাথেই হাটছে, অথচ রাস্তায় কেউ নেই। মনে মনে একটু থমকে যায় মিঠি। তারপর তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে বাড়ি ফেরে।
রাত হয়ে যায়, সকালের ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিলেও ভুলে যায়নি সে, ভাবতে থাকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবধি। দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে মিঠি দেখতে পায় হঠাৎ কেউ যেন তার সামনে দিয়ে সরে গেল। ভয় এর সাথে আসে আগ্রহ, মিঠি উঠে গিয়ে দেখে তার ঘরের পাশে Balcony-র চেয়ারে কেউ বসে আছে। কিন্তু কে? ওই চেয়ারে একমাত্র মিঠিই বসে প্রচন্ড আকাশ পাতাল ভাবনায় ডুবতে চাইলে। এতক্ষনে মা ও ঘুমিয়ে পড়েছে, কে ওখানে তাহলে? মিঠি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় চেয়ারের সামনে, "এটা স্বপ্ন না সত্যি?" ঠিক অবিকল আরেকটা মিঠিই বসে সেখানে। বসে থাকা ব্যক্তি হাত বাড়ায় তার দিকে, মিঠি তার হাত ধরতে যায় আর তখনি ঘুম ভাঙ্গে তার। স্বস্তি পায় সে, এটা স্বপ্নই ছিল। কিন্তু মনের মধ্যে কেউ যেন প্রশ্ন করে "কে সেই আমি?"
নিজের চিন্তার সাথে সারাদিন থাকলে হয়তো এরকমই কিছু হয়। মনের মধ্যে একটা অন্য ব্যক্তিত্ব তৈরী করে ফেলেছে সে, যে অস্তিত্ব পেতে চায় বাস্তবে। ভয় করলেও, মিঠি সেই ছায়ামূর্তিকে রূপ দেয় খাতায় পেনসিলে, তার চরিত্রের সমস্ত খুটিনাটি বানায় ছবিটিকে পর্যবেক্ষন করে, ঠিক নিজের মতোই রূপ দেয় তাকেও, নাম দেয় মিষ্টি, মিঠির সাথে মিলিয়ে।
এই রাত্রেও একই স্বপ্ন দেখে মিঠি। কিন্তু আর ভয় নয়, উঠে গিয়ে চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে সে বলে "আমি ভয়ংকরভাবে সুন্দর।" বসে থাকা মিষ্টি হাত বাড়িয়ে দেয় , মিঠি তার হাত ধরতে যায় আর ঠিক তখনি কেউ যেন গলা চেপে ধরে মিঠির। শ্বাস নিতে পারেনা সে। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলে দেখে সে নিজেই নিজের গলা চেপে ধরেছে। উঠে গিয়ে চোখে, মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে ঘরে আসে মিঠি। সেই ছায়ামূর্তি তার বালিসের পাশে এসে দাড়িয়েছে এবং এগিয়ে আসছে তার দিকে ধীরে ধীরে। মিঠি ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে মা এর কাছে যায়। সমস্ত ঘটনা শুনে তার মা বলে "বেশি চাপ নিয়ে ফেলেছিস তুই psychology নিয়ে তাই এসব স্বপ্ন দেখছিস, একবার বলতো, তোর ভাবনার জন্যই এসব হচ্ছে, তা নয় কি? বস এখানে, আমি জল নিয়ে আসি তোর জন্য।" কথা গুলো কেমন হাওয়ায় ভাসার মতো লাগে। মা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলে মিঠির মনে পড়ে বইতে পড়া Psychological Disorder এর বিষয়ে, Multiple Personality Disorder, যাকে বলে Schizophrenia। নিজেকে প্রশ্ন করে সে "আমি কি Schizophrenic? নিজের মধ্যেই আরো এক ব্যক্তি তৈরী করে ফেলেছি?" পিছন থেকে কেউ কাধে হাত রাখে তার। ঘুরে দেখে তারই ছায়ামূর্তি, মিষ্টি, তাকে বাষ্পীভূত গলায় বলছে "আমি Schizophrenic", মিঠি পিছিয়ে আসতে আসতে আটকে যায় দেওয়ালে। ঘুরে দেখে তার রজনীগন্ধার মালা পড়ানো ছবি ঝুলছে, মা পাশে বসে ধুপ সন্ধ্যে দেখাচ্ছে তাতে।
Psychology নিয়ে পড়তে পড়তে মিঠি কবে যে নিজেই Psychological Disorder এর শিকার হয়ে যায়, বুঝতে পারেনি কেউ। তাই সে নিজে মুক্তি পেলেও, তার অস্তিত্ব দেওয়া মিষ্টি নামক ছায়া-মিঠি মুক্তি পায়নি আজও। সে ঘুরে বেড়ায় বাড়ির আনাচে-কানাচে।
ঠিকই বুঝেছিল মিঠি, মানুষের মনের চেয়ে শক্তিশালী কিছুই নেই।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
