সকালে উঠে জানলার ধারে বসে আছি। এখনো জল খাবার খাইনি। হাতে একটা চিরকূট নিয়ে সেটা ভাঁজ করছি আর গুনছি। একটা ভাঁজ, দুটো ভাঁজ, তিনটে- চারটে- পাঁচটা- ছ-টা, ব্যাস? মাত্র ছ-টাই? চিরকূট টা ফেলে দিয়ে ঘরে গিয়ে বসলাম। জল খাবার খেয়ে এসে জানলার ধারে বসে লোকজন দেখছি।
মনে করছি আট মাস আগের কথা। সেবার ও এরকম ফাঁকা রাস্তা ছিল। রাস্তায় মাত্র চারজন লোক ছিল। সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক ভদ্রলোক। আমায় নিয়ে তাদের মাঝে পাঁচ নম্বর অভদ্র লোক হয়েছিল সেদিন। আমি যখন তাদের সামনে পকেট থেকে আমার ছ-টা বুলেট ভরা পিস্তল বের করেছিলাম, তারা চমকে গেছিল। কিন্তু থমকে দাঁড়ায়নি। তারা ওইভাবেই হেঁটে যাচ্ছিল যেন এই বিশ্বের সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ঘরে পৌঁছোবেই। আমি ভেবেছিলাম আমার থেকে বড়ো বাধা আর তাদের নেই, সেদিন তা-ই হয়েছিল। রাস্তায় একসাথে চার জন প্রাপ্ত বয়স্ক ভদ্রলোক লুটিয়ে পড়েছিল, রক্তাক্ত অবস্থায়, আমার মতো অভদ্র লোকের পিস্তলের গুলিতে। শেষ দুটো গুলি নিয়ে আমি বাড়ি ফিরেছিলাম। কি হবে এই দুটো গুলি দিয়ে, তা জানতাম না আমি। সেদিন সকালের চিরকূট- টা একটু ছোটো ছিল, সে চার ভাঁজ এর বেশি ভাঁজ হয়নি, সেটা আমার হাতের মাপের ভুল ছিল। তাই ছ-টা গুলি নিয়েও আমি চারজন কেই মেরেছি মাত্র। কারন সেদিন রাস্তায় চারজন ভদ্রলোক ছিল, আর আমায় নিয়ে হয়েছিল পাঁচ নম্বর অভদ্র লোক।
তবে আট মাস আগে, সেদিন এর সকালের চিরকূট টা ছিল তার আগের বারের থেকে বড়ো। সেটা তার ও চার মাস আগের কথা। মনে করছি, এই আট মাস, আর ওদিকের চার মাস আগের কথা, মানে বারো মাস আগের কথা। পুরো এক বছর কেটে গেল আমার গুলির সংখ্যা ছয়-তে আনতে। সেটা ছিল আমার প্রথম কাজ। এক বছর আগেও আমি এরকমই একটা সকালে এই জানলার ধারে বসে চিরকূট ভাঁজ করছিলাম, তবে সেটা কোনো ভাবেই দুবার এর বেশি ভাঁজ হয়নি। তাই আমার পিস্তল এর চারটে গুলি নিয়েই আমাকে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। সেদিন ছিল রাস্তা আরো ফাঁকা। দুটো প্রাপ্ত বয়স্ক ভদ্রলোক ছিল রাস্তায়, আমায় নিয়ে তাদের মাঝে হয়েছিল তিন নম্বর অভদ্র লোক। সেদিন ভেবেছিলাম, আমার চিরকূট এর ভাঁজ এর দ্বিগুন মাসে গিয়ে আবার বসবো বড়ো চিরকূট নিয়ে। তাই দুটো ভাঁজ এর চিরকূট এর থেকে বড়ো চিরকূট নিয়ে বসেছিলাম চার মাস পর। সেবার হল চারটে ভাঁজ, চারটে খুন। সেদিন ভেবেছিলাম এর দ্বিগুন মাসে আবার বসবো আমি বড়ো চিরকূট নিয়ে। আজ সেই চার মাসের দ্বিগুন মাস, মানে আট নম্বর মাস। আজ আবার বসেছি বড়ো চিরকূট নিয়ে। আর এবার আমার শেষ কাজ হবে। কারন আমার পিস্তলে মাত্র ছ-টা বুলেট ই ধরে। বেড়োই এবার পিস্তল নিয়ে। রাস্তায় পেয়ে গেছি ছ-জন লোক।
ঘর থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় এসে দাড়ালাম। প্রতিবারের মতো এবারেও রাস্তায় ছ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ভদ্রলোক, আমার নিয়ে তাদের মাঝে সাত নম্বর অভদ্র লোক। আমি পিস্তল বের করলাম। প্রতিবারের মতো এবারেও তারা চমকে গেল কিন্তু থমকে দাঁড়ালো না। হেঁটে চললো সব বাধা অতিক্রম করে। তবে আমার বুলেটের থেকে বড়ো বাধা নেই তাদের।
এক-দুই-তিন-চার-পাঁচ.....
পর পর রাস্তায় লুটিয়ে পড়লো পাঁচ জন ভদ্রলোক রক্তাক্ত অবস্থায়, এই অভদ্র লোকের পিস্তলের গুলিতে। আমার সাধের ছয় নম্বর গুলি চালাতে যাবো ঠিক তখনই দেখি ছয় নম্বর ভদ্রলোক থমকে দাঁড়ালো। সে আর পা বাড়ালো না।
এইতো আমায় দেখে একজন থমকে দাঁড়িয়েছে। আমায় একজন বাধা ভেবেছে। আমি পিস্তল নামালাম তার দিক থেকে, সে ভদ্রলোক আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে থমকে দাঁড়িয়ে। ঠিক তখনই দেখলাম এক মা আর তার তিন বছরের শিশু এগিয়ে আসছে। রাস্তায় পাঁচ জনের রক্তাক্ত শরীর আর আমার হাতে পিস্তল দেখে বাচ্চাটা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আমি পিছু পা হলাম না। শুধু হাত থেকে ফেলে দিলাম পিস্তল টা। পুলিশ এসে আমায় ঘিরে ফেললো নিমেষের মধ্যে। শুনতে পাচ্ছিলাম তাদের কথা, "He's the serial killer. The wanted criminal, একেই arrest করার order পেয়েছিলাম আমরা, কিন্তু কোনো ভাবেই হাতে নাতে প্রমান পাই নি। " অন্য একজন আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, "You are under arrest", হাতে হাতকড়া পড়িয়ে তারা আমায় টেনে নিয়ে গেল। আমি পাস কাটিয়ে এলাম সেই ক্রন্দনরত বাচ্চাটার। আর পিছলে ফেলে এলাম আমার ছ-বুলেট ওয়ালা পিস্তল, যেটাতে সেই ছ-নম্বর বুলেট টা ভেদ করতে পারলো না কারোর শরীর।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.
