অকস্মাৎ

5 1 0
                                    

আমার মর্নিং কলেজ হওয়ায় খুব সকাল সকাল প্রতিদিন কলেজ যেতে হয়। সেদিন ও তাই সকাল সকাল রওনা দিয়েছিলাম কলেজের উদ্দেশ্য। পুরো জায়গাটা শহর হওয়া সত্ত্বেও ঠিক এই কলেজের আশ পাশটা দেখলে মনে হয় যেন বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর একটা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম অংশ লেখক এখানেই ফেলে গেছেন। রাস্তার ধারে সেই ঘন ঝোপ ঝাড়, পুরোনো একটা বটগাছ, তার পাশে সিমেন্ট দিয়ে বসার জন্য জায়গা, আর বটগাছটার নিচে একটা শিবলিঙ্গ। প্রতিদিন এই একই জায়গা দিয়ে যেতে যেতে যখনই একঘেয়ে লাগে, এক ঝলক শিবলিঙ্গটার দিকে তাকালেই মনটা ভালো হয়ে যায়। এখনো এখানে ভোর বেলা লোকজন এসে পুজো দিয়ে যায়, ধুপের গন্ধে বোঝা যায় এর নিত্যপুজোর অস্তিত্ব। ঠিক সেদিন ও সকালে যখন কলেজে এসে পড়েছি, দেখি সেই বটগাছটার নিচে একজন বয়স্ক মহিলা বসে আছেন। প্রতিদিন আসা সত্ত্বেও কাওকে দেখা যায়না কিন্তু হঠাৎ ওই মহিলাকে দেখে একটু অবাকই হয়েছিলাম। সকাল তখন ছ-টা দশ। সেই মহিলা একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়ে পা ছড়িয়ে বসে আছেন গাছের নিচে। চুল পেকে সমস্তটা সাদা হয়ে গেছে। সেই সাদা এলোচুলে তিনি পা ছড়িয়ে বসে পা দোলাচ্ছেন গাছের নিচে। তারপরেই সাড়ে ছ-টায় ক্লাস শুরু হওয়ার কারনে আর সেখানে দাঁড়ায়নি আমি। চলে গেছিলাম তাড়াহুড়ো করে। কিন্তু যখন সকাল সাড়ে দশটায় ছুটি হল, তখন আর দেখতে পাইনি সেই বয়স্ক মহিলাকে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অতোক্ষন কেউ বসে থাকবে না, তাই না ভেবেই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেছিলাম।

কোনো অলীক কিছু না হওয়া সত্ত্বেও সেই বয়স্ক মহিলা মাথা থেকে বেড়োচ্ছিল না আমার। ওনাকে দেখলে কোনো সাধারন মানুষের মতো লাগে না। কেমন একটা যেন ডার্ক এনার্জি কাজ করে ওনার আশে পাশে, তাই উনি থাকলে আর কোনো কিছুর উপরেই চোখ যায় না। পরেরদিন ও একই সময় কলেজের সেই রাস্তাটায় গিয়ে দেখি আবার তিনি বসে আছেন বটগাছের নিচে। পরনের শাড়িটারও বদল হয়নি, এলোচুলেরও বদল হয়নি। ঠিক যেমন কাল দেখেছিলাম, আজকেও একই সমস্ত কিছু, পরিবর্তন বলতে যেন শুধু দিনটার হয়েছে, আর সাথে আমার। আজকে ওনাকে দেখলাম আমার দিকেই তাকাচ্ছেন। আমি অগত্যা চোখ সরিয়ে সামনে থেকে হেঁটে এগিয়ে যেতে লাগলাম। তবে আমার এনাকে অদ্ভুত লাগলেও, আমাদের বন্ধু বান্ধবিদের লাগে না। ওরা আমার কথা শুনে বলে, "ধুর তুই না একটু বেশি ভাবিস। আসলে উনি বয়স্ক মানুষ তো, তাই ভোর বেলা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় এখানে এসে বসেন।" আমিও শেষমেশ ওদের কথাই বিশ্বাস করে নিলাম। অদ্ভুত লাগলেও নিজেকে বোঝালাম যে এটা খুবই সাধারন ঘটনা। শুধু ভাবি, যে উনি প্রতিদিন একই শাড়ি পড়ে থাকেন। একটা মানুষ প্রতিদিন কিকরে এক রকম পোশাক পড়েন!!

~HAWAII~Where stories live. Discover now