এইস কার্ড

0 1 0
                                    

"এই আমার পাচঁটা স্ট্যাক সম্পুর্ণ হল, আর একটা স্ট্যাক হলেই আমি উইনার হয়ে যাবো"- তাস গুলো পরপর সাজিয়ে রেখে জিওন্সিন বলল। লিসুবিন তার চারটে স্ট্যাক সম্পুর্ণ করে জিওন্সিনের পাশে রেখে বলল " আমি কী হব? রানার আপ?" এই কথা শুনে জিওন্সিন, অরদিন আর সিয়ান হেসে ফেলল।

লিসুবিন, অরদিন, সিয়ান আর জিওন্সিন চারজন যাচ্ছে দার্জিলিং ঘুরতে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তাদের এই এক মাসের ছুটির ৬ দিন কাটানোর গন্তব্য হয়েছে দার্জিলিং। আজ ট্রেনে সকাল বেলা বেড়িয়েছে সবাই, পরেরদিন সকাল বেলা পৌঁছোবে, এই মাঝ খানের সময়টা কি করে কাটানো যায় ভেবে না পেয়ে সবাই মিলে স্পাইডার সলিটায়ার খেলতে বসেছে, যেটা একেবারে শেষের দিকে। ইতিমধ্যেই জিওন্সিনের ছ-টা স্ট্যাক সম্পুর্ণ হয়েই যেতো কিন্তু তার শেষের এইস কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। সে বলে "আমি তো গুনে গুনে তেরোটা কার্ড নিয়ে এসেছি, তাহলে এইস কার্ড কোথায় গেল?" লিসুবিন বলে, "তুই ব্যাগটা একবার ভালো করে দেখ তো, ওখানেই থাকবে।" কিন্তু ব্যাগ খোঁজাও ব্যর্থ হল, সেখানে কোনো এইস কার্ড নেই। লিসুবিন বলে "এই সিয়ান আর অরদিন তোদের কার্ড গুলো ভালো করে দেখ তো, দুটো এইস থাকতে পারে।" সিয়ান আর অরদিন তাদের কার্ড খুঁজে দেখলো কোনো এইস কার্ড নেই। অথচ তাদের স্ট্যাকের এইস আছে। জিওন্সিন বলে, "আমি এতোটাই ভুল করলাম কার্ড আনতে?" লিসুবিন তাকে বুঝিয়ে বলে, "আরে ছাড়, ঠিক ওখানে গিয়ে ব্যাগ খুঁজলেই পাওয়া যাবে।" ঠিক এইসময় রাত্রের খাবার চলে আসায় তারা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাসের কথাটাও চাপা পড়ে যায়।

পরেরদিন সকালে ট্রেন দার্জিলিং পৌঁছলে সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে নিজেদের বুক করা হোটেলে ওঠে সবাই। সেখানে নিজের নিজের রুমে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে একসাথে সকালের খাওয়া দাওয়া করে ঠিক করে বিকেল থেকে ঘোরা শুরু করবে। সেই মতো তারা একটু ঘুমিয়ে নেয়।

সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও জিওন্সিনের ঘুম আসেনা কিছুতেই, সে শুধুই ভাবতে থাকে হারিয়ে যাওয়া এইস কার্ডের কথা, আর ভাবে "আমি এতো ভুল করলাম?" লাগেজ গুলো আর একবার ঘেঁটে দেখে সত্যিই কোথাও সেই কার্ড নেই। অথচ তার পরিষ্কার মনে আছে তেরোটা করে কার্ড গুনে ব্যাগে রাখার।

শেষের এইস কার্ডটা হারিয়ে গেছে ভেবে নিয়েই জিওন্সিন ব্যাগ গুলো আবার গুছিয়ে নিজের জায়গায় রাখে তারপর টেবিল থেকে জলের বোতল নিয়ে একটু জল খায়। এই সময় হঠাৎ কলিং বেল বাজলে জিওন্সিন দরজা খুলে দেখে যে লিসুবিন এসেছে। সে লিসুবিনকে বলে "কিরে তুই ঘুমোসনি?" লিসুবিন বলে, "বেশি জার্নি করলে আমার ঘুম আসে না। কিন্তু তুই ঘুমোসনি কেন?" জিওন্সিন বলে "তোর কথা মতো সব লাগেজ গুলো একবার খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না কার্ডটা। সে বাদ দে, তুই এখন হঠাৎ?" লিসুবিন উত্তরে বলে, "আমি আসলে আমার ওয়াইপস আনতে ভুলে গেছি, তোর একটা দে।" জিওন্সিন তাকে ওয়াইপস বের করে দিলে লিসুবিন মুখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে দিয়ে জিওন্সিন দেখে এখনো দু ঘন্টা সময় আছে হাতে। সে ঘুমিয়ে পড়ে।

ঘুম থেকে উঠে সবাই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বাইরে বেড়োনোর সময় রুমে তালা দিতে গিয়ে জিওন্সিন দেখে তার টেবিলের উপর একটা এইস কার্ড রাখা আছে। হঠাৎ দেখে অবাক হয়ে গেলেও তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এটা কে করেছে। কারন তার ঘরে লিসুবিন আসার আগে অবধি ও টেবিলে এটা ছিল না।

সব বন্ধুরা সারা বিকেল থেকে সারা সন্ধ্যে ঘুরে যখন হোটেলে ফিরে এসে ডিনার করতে বসে, তখন জিওন্সিন তার ছ-নম্বর স্ট্যাকের শেষ এইস কার্ডটা সাজিয়ে দিয়ে বলে, "উইনার হেয়ার"। লিসুবিন বলে, "জিওন্সিন আমার জন্য উইনার হওয়া থেকে আটকে ছিল এতক্ষন, এবার সে উইনার হয়েছে।" এরপর সে নিজের অসম্পুর্ন দুটো স্ট্যাক সাজিয়ে দিয়ে বলে "এইবার? আমি কী হব? রানার আপ?" এই কথা শুনে আবার জিওন্সিন, অরদিন আর সিয়ান সবাই এক সাতগে হেসে ফেলে লিসুবিনের কাজ দেখে।

~HAWAII~Where stories live. Discover now