চকলেট ডে

1 1 0
                                    

বিকেল বেলা বোন হঠাৎই বায়না শুরু করল, "এই দিদি, আজ তো চকলেট ডে, তুই আমায় আজ চকলেট দিবি।" আমিও খুনসুটি করে বললাম, "সে তো প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য, তুই কি করবি এসব নিয়ে? তোর তো কেউ নেই।" বোন রেগে বলে, "না দিদি, এরকম বললে কিন্তু চলবে না। আমার জন্মদিন গেল, তুই কিছুই গিফট দিসনি। তাই আজ তোকে আমায় চকলেট কিনে দিতেই হবে।" অগত্যা বললাম, "ঠিক আছে চল কিনে দেব, তুই তৈরী হয়ে আয়, আমি বেড়োচ্ছি গাড়ি নিয়ে।" কি আর করি, বোনের আবদার।গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। বোন ও এসে গাড়িতে উঠে পড়েছে। ওকে বললাম, "এই যে তুই চকলেট নিয়ে মাতামাতি করছিস এই ধেড়ে বয়সে, কত তোর বয়সি ছেলে মেয়ে সংসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছে। তারা দিনে দু-বেলা ঠিক মতো খেতেই পারে না পেট ভরে, চকলেট তাদের কাছে স্বপ্ন।" এটা শুনে বোন বলল, "এইসব বলে কিন্তু তুই পার পাবি না, বলে রাখছি। কিনে তোকে দিতেই হবে। আর বাড়ি ফেরার সময় ওই নতুন আইস্ক্রিম পার্লারটা থেকে আইস্ক্রিম নিয়ে যাবো কিন্তু।" আমি হেসে বললাম, "আচ্ছা বাবা চল তাই হবে, এই দেখ এসে গেছি দোকানে, যা গিয়ে দেখ কি কি নিবি, আমি আসছি গাড়ি লক করে।" গাড়ি লক করে যখন দোকানের কাছে গেলাম, তখন দেখি একটা বাচ্চা ছেলে কান্নাকাটি করছে তার মা এর কাছে। আমি কিছু বলে ওঠার আগেই আমার বোন বলল, "এই দিদি এইগুলো নেব আমি, দুটো ডেয়ারী মিল্ক, দুটো কিন্ডার জয়, একটা মিল্কিবার, আর দুটো কিটক্যাট।" চকলেট গুলো কিনে নিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় আমি বোনকে থামিয়ে দিয়ে বললাম "বাচ্চাটা কাদছে কেন রে?" বোন বলল, "কি করে জানব বল! তিন থেকে চার বছর বয়স হবে ওর, এইটুকু বাচ্চা, হয়ত বকা খেয়ে কাদছে।" আমি বললাম, "অনেকক্ষন থেকেই কাদছে তো!" তার মা আমাদের কথা শুনতে পেয়ে বলল, "ওর বাবা সকালে কাজে যাওয়ার সময় বলে গেছিল চকলেট কিনে দেবে। কিন্তু এখনও সে ফেরেনি, ওর বাবা না আসা অবধি সরবেই না দোকান থেকে। তাই আমি বকা দেওয়ায় কাদছে। জানিনা সে কখন ফিরবে। এটাও জানিনা যে আদেও টাকা পাবে কিনা। আমাদের দু-বেলার খাবারই ঠিক করে জোটে না, আবার চকলেট। আমি সব শুনে বললাম, " তুমি কোন চকলেট নেবে বাবু?" ওর মা শুনে বলল, "এসব করবেন না দিদি, আমাদের সামর্থ্য নেই, ও সেটা বুঝুক।" আমি বললাম, "সে আজকের দিনটা ছেড়ে এরপর থেকে না হয় বুঝবে।" আমার দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটা আঙুল দিয়ে একটা চকলেটের দিকে দেখাল। আমি দোকান থেকে সেটা কিনে তার হাতে দিলাম। তার মা বলল, "তুমি যে এটা করলে, তার জন্য আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব। কি বলে যে তোমায় ধন্যবাদ দিই!" তারপর ছেলেকে বললেন, "ধন্যবাদ বলো ওনাকে।" বাচ্চাটা খুব মিষ্টি করে আমায় ধন্যবাদ ও বলল এক গাল হাসি নিয়ে। সাথে সাথেই আমার মনের মধ্যেও খুশির ঝলক দেখা দিল। তাকে একটু আদর করে দিয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে আইস্ক্রিম পার্লারের দিকে বোনের সাথে।এ যেন এক অন্যরকমের চকলেট ডে ছিল। সত্যিই তো! চকলেট পাওয়ার অধিকার কি শুধুই আমাদের? ওর মুখের ওই হাসিটার কাছে, আর আমার এই আনন্দ অনুভূতির কাছে সবই যেন ম্লান হয়ে গেল এক নিমেষে। আজকের চকলেট ডে টা নাহয় ওই বাচ্চাটার মিষ্টি হাসির সাথেই থেকে যাক! -শিল্পা প্রামানিক

~HAWAII~Where stories live. Discover now