রাত্রি তখন তিনটে, সবাই যখন নিজেদের ঘুমে মত্ত, ঠিক সেই সময় কনকনে ঠান্ডায় বাড়ি ছাড়লেন সুভাষ শিশিরের সাথে। মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশ ধরে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেলেন তিনি বিদেশের উদ্দেশ্যে। আফগানিস্তানের দরজায় এসে নিজের পোশাক বদলে এক সাধারন মানুষের মতো বেশ নিয়ে ঢুকলেন তিনি মস্কোতে। তখন কেউ ভাবেনি যে এই সাধারন এক মানুষ সবার কাছে হয়ে উঠবেন অসাধারণ, হয়ে উঠবেন নেতাজি। শিশিরের ছায়া সঙ্গী হওয়ার পরেও দুজনের মধ্যে এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় যে সুভাষ আদও কখনো মস্কো ছেড়ে ভারতে আসতে পারবেন কিনা, ব্রিটিশ শাসন শেষ করতে পারবেন কিনা। কিন্তু সুভাষ তো একটাই হয়। তিনি মস্কো তে গিয়ে খুঁজে খুঁজে ভারতীয়দের দল গঠন করেন। ব্রিটিশ দের সাথে হাত মেলানো ভারতীয় নয়। যারা অসময়ে গর্জে উঠতে পারে, সেই সব ভারতীয়দের নিয়ে শুরু হয় দল গঠন। সুভাষ যখন বুঝেছিলেন যে গান্ধির অহিংস প্রথা এখানে চলবে না, তিনি শুরু করলেন সবাইকে শারীরিক প্রশিক্ষণ দিতে। দূরদর্শী সুভাষ বুঝেছিলেন যে তাদের সবাইকে হাতে হাত রেখে যুদ্ধ করেই নিজেদের দেশকে স্বাধীন করতে হবে। ঠিক একইভাবে তিনি এটাও বুঝেছিলেন যে কিছু ভারতীয়দের সংকীর্ন, নোংরা রাজনৈতিক কাজের জন্যই ভারত এখনো ব্রিটিশের আওতায়। তাই সুভাষ শারীরিক প্রশিক্ষনের সাথে সাথে তার শিষ্যদের বোঝান যে অন্য মানুষ নয়, নিজের দেশের কিছু মানুষই বিশ্বাস ঘাতক।একসময় লক্ষী সাইগল চলে আসেন মস্কোতে, শুধুমাত্র সুভাষের সাথে দেখা করতে, তার দলে যোগ দিতে। সুভাষ পেয়ে যান তার অন্যতম শিষ্যকে। লক্ষী সাইগল কে বানানো হয় বাকিদের হেড। সুভাষের অবর্তমানে লক্ষীই তাদের গাইড করে চলেছিলেন বহুদিন।এক সময় শেষ হয় প্রশিক্ষন, সুভাষ সবাইকে জানান যে তার ভারতে যাওয়ার সময় এসেছে।সুভাষের পরিশ্রমের ফসল শেষ পর্যন্ত ফলেছিল। কিন্তু তিনি তার যোগ্য সম্মান পাননি। ভারতের সেই সব মানুষরাই আবার ক্ষমতায় এলো যারা ব্রিটিশদের সাথে নোংরা রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে গেছে। কিন্তু সাধারন মানুষ সুভাষকে ভোলেননি। তাদের ভালোবাসায়, তাদের সম্মানে এবার সুভাষ হয়ে উঠলেন সবার প্রিয় নেতাজি। সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস।শোনা যায়, ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও নেতাজিকে দুবার দেখা গেছে। কিন্তু মানুষের ভিড়ে তিনি আর আসেননি। অন্য সব রাজনৈতিক নেতারা যেখানে নোংরা কাজ করেও, বিশ্বাস ঘাতকতা করেও ভারতের ক্ষমতায় এল, সেখানে নেতাজি তার প্রাপ্যটুকুও অবলীলায় হারিয়েছেন। দাবি করেননি কোনো রাজনৈতিক পদ। লড়াই করেননি নিজের জন্য।যে মানুষটা পুরো দেশের জন্য এতগুলো বছর ধরে লড়াই করেছেন, যে মানুষটা দেশের জন্য নিজের চাকরি ছেড়েছেন, যে মানুষটা ভারতীয় দের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করেছেন, ঠিক সেই মানুষ টাকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি স্বাধীন ভারতের কোনো রাজনৈতিক পদ ছিনিয়ে নিতে। নিজের প্রাপ্যটুকু ছিনিয়ে নিতে। তিনি নিজের সবটা হারিয়েছিলেন অবলীলায়। এখানেই তিনি সুভাষ থেকে হয়ে উঠেছেন সবার প্রিয় নেতাজি। সবার প্রিয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস। ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, ভারতের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী। রচিত হল ঘরের ছেলে সুভাষের অদম্য লড়াই থেকে সবার প্রানের প্রিয় নেতাজি হয়ে হয়ে ওঠার গল্প।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasíaStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.