অরিত্রের ঘুরতে এসে মনে পড়ে ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনেই সে এসেছিল হাজারদুয়ারী বেড়াতে। Photography Group এর সাথে যুক্ত অরিত্র যখন শুনেছিল যে তাদের workshop হাজারদুয়ারী তেই হবে, সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছিল রিখিয়াকে। দুজন একসাথে ঘুরতে যাওয়ার এই প্রথম সুযোগটা সে ছাড়তে চায়নি। আর 1 মাস আগেই বাবা মারা যাওয়ার পর কেমন একটা হয়ে গেছিল রিখিয়া। অরিত্র দেখেছিল ও উদাস হয়ে নিজের মনেই কথা বলত, কেমন এলোমেলো থাকতো। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরেই সে স্বাভাবিক আচরণ করছে। হয়ত সামলে নিয়েছে নিজেকে অনেকটা, তাই সাহস করে অরিত্র রিখিয়াকে বলেছিল ঘুরতে যাওয়ার কথাটা। কিন্তু তারপরেই কেমন যেন সব ওলট-পালট হয়ে গেল তার জীবনে।
রিখিয়াকে দেখেই অরিত্র বুঝেছিল জীবনে টাকা থাকলেই সুখ পাওয়া যায় না। তার বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও একা হয়ে গেছিলেন, রিখিয়া একমাত্র মেয়ে, সারাদিন theatre এর কাজে ব্যস্ত থাকে। দিনের শেষে সে হাতে মোটা টাকা পেলেও মাকে সময় দেওয়ার মতো অবসর থাকে না তার। তার মা ও মোটা টাকা পেনশন পান কিন্তু একাকিত্বে ভোগেন। সেই এক বছর আগে আজকের দিনের সাথে কোনো মিল পায়না অরিত্র। সে স্মৃতিচারন করে।
রিখিয়ার সাথে অরিত্রর পরিচয় হয় কলেজে। দুজনেই Film Studies Department এর student। অরিত্রর major এ ছিল photography আর রিখিয়ার major এ ছিল Lights। College এর Project work এ প্রথম দেখা হয় দুজনের। সেই থেকেই আলাপ-পরিচয়, বন্ধুত্ব, তারপরেই বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেম। কলেজ pass করার পর দুজনেই Theatre নিয়ে কাজ করা শুরু করে আর সেখানে রিখিয়া হয় অরিত্রর partner। এই theatre এর কাজেই workshop হয়েছিল অরিত্রদের হাজারদুয়ারী তে, কিন্তু রিখিয়ার সাথে প্রথম ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেল তার। রিখিয়া রাজি হলেও সেদিন সকালে অরিত্র যখন তাকে ফোন করে, ওপারে "আয় তবে সহচরী" বাজার পর রিখিয়া ফোন তুলেছিল, খুব অস্বস্থিতে বলেছিল "শরীরটা খুব খারাপ লাগছে রে, আমি যেতে পারবো না।" এই কথা শুনে খারাপ লাগা সত্ত্বেও সে বলেছিল "কি হয়েছে? কাল রাত্রেই তো ঠিক ছিলি... আচ্ছা তাহলে এবার নাহয় থাক, তুই সুস্থ হলেই যাবো। কেমন?" রিখিয়া শুধু "মাথাটা ভীষণ যন্ত্রনা করছে" বলেই ফোন রেখে দেয়। তাই অরিত্র আর ওকে বিরক্ত করেনি, ওর গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল ঠিক নেই। সেদিন workshop এ কাজের চাপে আর কথা হয়নি তাদের। বাড়ি ফিরে তড়িঘড়ি অরিত্র যখন রিখিয়াকে ফোন করে, তার মা ফোন ধরে বলেছিলেন "রিখিয়া আর নেই, আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।" অরিত্র থতমত খেয়ে বলে "কি...কি বলছ কাকিমা? কিকরে?....ও তো সকালেই কথা বলল আমার সাথে। এটা কিকরে হতে পারে? রিখিয়া... রিখিয়া আর নেই??" রিখিয়ার মা এর গলা কান্নায় ভেঙে পড়ে, অরিত্র নিজের ধরা গলাটা সামলে নিয়ে বলে "আমি আসছি", ফোন কেটেই সে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রিখিয়ার বাড়ির রওনায়।
অরিত্র যখন পৌছেছিল সেখানে, দেখতে পায় পুলিশরা রিখিয়ার নীল শরীর ঘিরে দাঁড়িয়ে একটা চিরকূট পড়ছে। তাতে লেখা
-"বাবা তুমি চিন্তা করো না, আমি আসছি এখনই তোমার কাছে। আর মা! তুমি ঠিক সময়ে ওষুধ খেও আর অরিত্রকে বলে দিও, হয়ত কোনোদিন আর দেখা হবে না ওর সাথে, আমায় যেন ক্ষমা করে দেয়।"
আর কিছু ভাবতে পারেনি কেউ। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে সবাই দেখে গেল রিখিয়ার মৃতদেহ নিয়ে পুলিশ যাচ্ছে Post Mortem করতে। একমাত্র মেয়ে রিখিয়াকে হারিয়ে ফেলার পর আর কিছু থাকল না তার মা এর জীবনে। অরিত্র ওনার হাত দুটো ধরে বলল "কাকিমা....এটাই কি হওয়ার ছিল?।" দুজন কান্নার বাধ সামলাতে পারে না আর।
অরিত্রর প্রিয় গানটা আর কোনোদিন শোনা হল না রিখিয়ার caller tune এ। সকালেই "আয় তবে সহচরী" শুনেছে অরিত্র, নিজের অজান্তেই, শেষবারের মতো।
YOU ARE READING
~HAWAII~
FantasyStory about the island Hawaii...created with the favourite person, with love and Imagination.