সূচনা অধ্যায়

143 1 0
                                    


রান্নাঘরে বড় পাতিলে পানি ফুটছে টগবগ করে। শর্মীর সেদিকে খেয়াল নেই। সে সমস্ত মনোযোগ একাগ্র করে পাশের বসার ঘরের আলোচনা শোনার চেষ্টা করছে। স্পষ্ট কিছু বুঝা না গেলেও সীমা বেগমের কর্কশ কণ্ঠস্বর ঠিকই কানে বাজছে। এই তো খানিকক্ষণ আগেই ছোট ছেলের উপর রুষ্ট হয়ে চিল্লিয়ে উঠলেন,
ওর আবার মতামতের কি আছে? আমরা যা বলবো তাই করবে।

সীমা বেগমের কথায় সবাই স্বস্তি পেলেও শর্মীর মনটা ভার হয়ে গিয়েছিলো। মেয়েটার জন্য শর্মীর বড় মায়া হয়। কেমন পুতুলের মতো সবাই নাচাচ্ছে তাকে। যে যার মতো সুতোয় টান দিচ্ছে আর মেয়েটা দুলে উঠছে। সবার চোখে সেই দুলে আবার উঠা তিক্ত ঠেকে। তারপর শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। শর্মীর মন পুড়লেও সে চুপ থাকে। এ সংসারে টিকে থাকতে হলে চোখ বুজে, বিবেকের দরজায় তালা বদ্ধ করে রাখতে হয়। এতোদিন অবশ্য সে তাই করে এসেছে। কিন্তু এই শেষবেলা এসে মনটা কেমন করে উঠছে।
বসার ঘর থেকে সীমা বেগম চিল্লিয়ে উঠলেন,
- বড় বউ, চা বানাতে পাঠাইলাম। তুমি দেখি পানি সেদ্ধ করে গ্যাসের সিলিন্ডার খালি করা শুরু করছো। সেই কখন থেকে পানি উতাল দিতেছে! আমি এই ঘর থেকে শুনতে পাচ্ছি। তোমার কানে যাচ্ছে না? কাজকর্মে মন নাই, খালি ধান্দাবাজী।

শাশুড়ির চিল্লানিতে শর্মীর ধ্যান ভাঙলো। আসলেই অনেকক্ষন ধরে পানি ফুটছে। সে দ্রুত হাতে চা বানিয়ে নিলো। শাশুড়ির আদেশ মতো রং চায়ে খানিকটা লবণও মিশিয়ে দিলো। এতে নাকি চিনি কম লাগে। লবণের কারনে হালকা মিষ্টিও কড়া স্বাদ দেয়। এদিকে যে চায়ের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় সেদিকে কে নজর দিবে!

বসার ঘরের একপাশে একটি চৌকি রাখা। সেখানে গদি বিছিয়ে তার উপর বেডশীট, কুশন দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সীমা বেগমের সারাদিন কাটে এই চৌকির উপর বসে কিংবা শুয়ে। তবুও গভীর রাতে শোবার ঘরে যেতে উনার বেশ কষ্ট হয়। ক্লান্ত শরীরটা নাকি আর চলতে চায় না। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। সংসার টিকিয়ে রাখতে তড়িঘড়ি করে বড় ছেলের বিয়ে করিয়ে শর্মীকে নিয়ে এলেন। কথা ছিলো সংসারের দায়িত্ব ছেলের বউয়ের হাতে তুলে দিয়ে তিনি এবেলা বিশ্রাম করবেন। কিন্তু সরল চোখে ঘটনা এমন দেখালেও সিংহাসন ছাড়ার পরেও সমস্ত ক্ষমতা এখনো সীমা বেগমের মুঠোর মধ্যেই রয়েছে। শর্মী শুধু উনার আদেশের পালন করে।

হে সখাWhere stories live. Discover now