31

26 1 0
                                    

রেহবারের ঘুম ভাঙ্গলো একটু বেলা করে। রোজকার অভ্যাস অনুযায়ী চোখে মেলে গুলিস্তাকে দেখতে না পেয়ে বিচলিত বোধ করলো। ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে অলস কন্ঠে ডাকলো,
- ফুল, এই ফুল?

কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। পাশাপাশি দুটো বেডরুমের সামনের অংশে হলরুম। ওয়াশরুম, ব্যালকনি কোথাও নেই গুলিস্তা। রেহবার ঘুম ছুটে গেছে এতোক্ষণে। গুলিস্তা সাধারণত কটেজ ছেড়ে সকালের দিকে কোথাও যায় না। সাগরপাড়ে গেলেও সেটা বিকালবেলা। তাছাড়া ঘড়িতে ঘন্টার কাটা এখনো সাতের ঘর ছোয়নি। এতো সকালে কোথায় গেলো মেয়েটা? মোবাইলে কল দিয়ে দেখা গেলো, রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। দ্রুত পায়ে কিচেনে এসে দেখলো সায়ীদা জামান ও আম্বিয়া খাতুন সকালের নাস্তা তৈরি করছে। আশেপাশে কোথাও গুলিস্তা নেই৷
- মা, গুলিস্তা কোথায়?

সবজির কড়াইয়ে ঢাকনা চাপিয়ে আম্বিয়া খাতুন ছেলের দিকে তাকালেন।
- ঘর থেকে বের হতে তো দেখলাম না। আমি ভাবলাম, ঘুমাচ্ছে বোধহয়। ও ঘরে নেই?
- নাহ।
- ব্যালকনিতে দেখেছিস? ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে প্রায় সময়।
- নেই। আমি সব জায়গায় দেখেছি।

আম্বিয়া খাতুনের ভারী দুশ্চিন্তা হলো। ছেলের কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
- সেকি রে! এতো সকালে কোথায় গেলো?

মায়ের চিন্তিত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
- আরে চিন্তা করো। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেছে হয়তো। ওর আবার নিরিবিলিতে হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস আছে। ভোরবেলা হাঁটতে বেরিয়েছে গেছে হয়তো। আমি ভাবলাম ওকে বেরিয়ে যেতে তুমি দেখেছো বোধহয়। আমি একটু আশেপাশে খুঁজে দেখছি। এতোক্ষণে ফিরে আসার কথা ছিলো।

আম্বিয়া খাতুন নিজেও খুঁজতে বের হতে চাইলেন। রেহবার মানা করে দিলো। এমনিতেই মায়ের হাটু ব্যথা। বেশি হাঁটাহাঁটি করলে অসুস্থ হয়ে পরবে৷ মাকে বুঝিয়ে ঘরে রেখে সে নিজে বেরিয়ে পরলো৷ সকালবেলা রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা। একটু দূরে একটি স্কুলবাস দাঁড়িয়ে আছে। দু চারটে বাচ্চা এগিয়ে যাচ্ছে বাসের দিকে। সুনসান সড়কে এলোমেলো হাঁটতে গিয়ে রেহবারের মনে অদ্ভুত সব খেয়াল আসছে। বোকা ফুলটা অপরিচিত এই শহরে হুট করে হারিয়ে যেতে পারে। খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও সেসব সম্ভাবনাকে জোর করে দূরে ঠেলে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রেহবার। প্রধান সড়কের কোথাও গুলিস্তাকে দেখতে না পেয়ে এগিয়ে গেলো বীচের দিকে। দর্শনার্থীরা হাঁটতে বেরিয়েছে। হয়তো সূর্যাস্ত দেখার পর রুমে ফিরে যায়নি। সারাবছর হলিউড বীচ দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। এই এলাকায় বেশিরভাগ হোটেল আর রেস্টুরেন্ট। স্থানীয় মানুষজন খুবই কম। বহিরাগতদের আগমনের কারনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এখানে প্রায়শই ঘটে। এজন্যই বেশি চিন্তা হচ্ছে। দূর দূর হতে বিচিত্র ধরনের মানুষ আসে এখানে। বিচলিত রেহবার একেরপর এক কল করে যাচ্ছে গুলিস্তার মোবাইলে। কিন্তু অদ্ভুত মেয়েটা ফোন তুলছে না। রাগে, দুশ্চিন্তায় নিজের মাথার চুল নিজে টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে। আর কতো টর্চার করবে মেয়েটা! নিজেও মানসিক যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে, সাথে রেহবারকেও যন্ত্রণা দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো রেহবার নিজেও একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হবে। তারপর দুজনে সুখের সংসার করবে।

হে সখাWhere stories live. Discover now