এইটুকু বয়সেও নিজের কাজ নিজে করতে শিখেছে রিনাত। কাজে সে যথেষ্ট পারদর্শী। শপিংব্যাগগুলো টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মায়ের দেওয়া পাঞ্জাবীটি গা থেকে খুলে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখলো। ঘরের সাধারণ পোশাক পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে গিয়েও মায়ের কথা মনে পরায় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। কিচেনে গিয়ে মায়ের দেখা পেলো না। বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের বেডরুমের সামনে এসে বার কয়েক কড়া নাড়লো। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো আওয়াজে পেলো না। ফিরে যেতে গিয়েও দরজা খুলে সামান্য উঁকি দিলো ভেতরে। কেউ নেই। পুরো ঘর ফাঁকা। দুটো মানুষ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো! কৌতুহলী রিনাত ঘরে ঢুকে মাকে ডাকলো। মাম্মাম, মাম্মাম?
কেউ উত্তর দিলো না। বাবাকে ডাকলো। তবুও কেউ সাড়া দিলো না। কী যেনো ভেবে ব্যালকনিতে চলে গেলো। এক কোণায় বাবা-মাকে বসে থাকতে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। মায়ের ক্রন্দনরত মুখশ্রী দেখে প্রশ্ন নিয়ে তাকালো বাবার দিকে। কিন্তু বাবার চোখে মুখেও প্রশ্নের ছাপ। ছোট রিনাত মায়ের কাছে গিয়ে এক হাত বাড়িয়ে মাকে ছুঁতে চাইলো। তাতেই বিদ্যুৎ বেগে পেছনে ছিটকে সরে গেলো গুলিস্তা। একদম দেয়াল ভেঙে আরও দূরে সরে যেতে চাইছে। রিনাত বড্ড ভয় পেলো। বাবার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলো মায়ের দিকে।
একহাতে ছেলেকে আগলে রেহবার প্রশ্ন করলো,
- কি হয়েছে ফুল? ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি রেহবার। এই এদিকে তাকাও।গুলিস্তা তাকালো না। দু হাত আরোও গুটিয়ে নিলো বুকের কাছে। বাবা ছেলে নিশ্চুপ দৃষ্টি বিনিময় করলো। খুঁজে পেলো না কোনো উত্তর। রেহবার হাত বাড়িয়ে দিতেই খেয়াল করলো ভয়ে আরও বেশি কুঁকড়ে যাচ্ছে গুলিস্তা। পাশ থেকে রিনাত হাতের আঙ্গুল উঁচু করে প্রশ্ন করলো,
- মাম্মাম, তোমার কোলে ওটা কি?ছেলের আঙ্গুল লক্ষ্য করে রেহবারও তাকালো। এতোক্ষণে রেহবাবের নজরে এলো গুলিস্তা কিছু একটা কোলে আকড়ে নিয়ে বসে আছে৷ সকল ভয়কে উপেক্ষা করে দ্রুত গুলিস্তার নিকট পৌঁছে গেলো রেহবার।
- সব ঠিক আছে। আমাকে দেখতে দেও৷ যাস্ট রিলেক্স, ওকে?রেহবারের কথায় হয়তো একটু ভরসা পেলো। খানিকটা শীতল হলো গুলিস্তার শরীরের গড়ন৷ কোলে সামান্য উঁকি দিয়ে যা দেখলো তাতেই রেহবারের শ্বাস ছুটে যাওয়ার দশা। হাত বাড়িয়ে গুলিস্তার কোল থেকে কাপড়ে মুড়ে রাখা টোপলাটি সম্মুখে নিয়ে এলো। সত্যিই তাই৷ একটা বাচ্চা৷ আস্ত একটা মানব শিশু গুলিস্তার কোলে। রেহবার কি বলবে, কীভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারলো না৷ শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো গুলিস্তার দিকে৷ চমকেছে রিনাত নিজেও৷
সকলের ধাতস্থ হতে অনেকক্ষণ সময় লাগলো। ঘন্টা খানিক পর গুলিস্তা নিজেও কিছুটা স্বাভাবিক হলো। ঘুমন্ত শিশুটিকে কোলে নিয়েই হালকা দুলাচ্ছে৷ রিনাত ততোক্ষণে বাবার কোলে বসে চুপটি করে সাদা তোয়ালেতে প্যাঁচানো একটি জীবন্ত পুতুলকে দেখছে৷ ছোট ছোট হাত পা। চোখ বন্ধ করে শুধুই ঘুমাচ্ছে। ঢোক গিলে, হালকা কেশে গলার স্বর স্বাভাবিক করলো রেহবার। জানতে চাইলো,
- কার সন্তান? কোথায় পেলে?
YOU ARE READING
হে সখা
Romanceএকবার দেখেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো রেহবার ও গুলিস্তা। বিয়ের পর সব ঠিকঠাক চললেও গুলিস্তার নির্লিপ্ততা, অস্বাভাবিক ঠান্ডা আচরণ রেহবারের মনে গাঢ় সন্দেহের জন্ম দেয়। ভালো মন্দ সব পথ অবলম্বন করে মূল কারণ উদ্ধারের চেষ্টায় সামনে আসে গুলিস্তার অতীত। যা...