18

30 2 1
                                    


সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে অভিযোজন ক্ষমতা বিদ্যমান। বিরুপ পরিবেশের সাথে লড়াই করতে করতে যারা টিকে যায়, তারাই বেঁচে থাকার স্বাদ ভোগ করে। জীবনে পরিবর্তন আসবেই, তা মেনে নিয়ে নিজেকে খানিকটা ভেঙেচূড়ে নতুন করে গড়ে নিতে হয়। আঁধারে বসবাস করতে করতে গুলিস্তাও একসময় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কীভাবে টিকে থাকতে হয়, ভালো থাকতে হয় বুঝে গেছে। যে স্মৃতিগুলো ওকে ভীষণ পীড়া দেয়, সেগুলো এখন আর মনে করে না। ভুলে গিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করে।
গতকাল রিসিপশন থেকে ফিরে এসে সেই যে ঘুমিয়ে পরেছিলো, এক ঘুমে সকাল এসে গেছে। চোখ মেলে ভোরের আলোয় স্নান করে ভালো থাকার প্রত্যয় নিয়ে নতুন দিন শুরু হলো। বিছানার অপরপাশের জায়গাটুকু ফাঁকা। রেহবারের খোঁজে দ্রুত হলরুমে এসেও ওর দেখা মিললো না। চিন্তিত মনে কিচেনে গিয়ে ব্রেকফাস্ট তৈরী করে নিলো। ডাইনিং টেবিল খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করতে করতে বারংবার ঘড়ির দিকে চোখ তাকানো।
রেহবার ফিরতে ফিরতে প্রায় নয়টা বেজে গেলো। অফিসে যেতে হবে। ফ্রেশেনআপ হতে বাড়ি ফেরা৷ ডাইনিং টেবিলে গুলিস্তাকে দেখে ক্ষীণকাল চিন্তা ভাবনা করে নিলো। এভাবে দু'পক্ষই চুপচাপ থাকলে সমাধান মিলবে না। গুলিস্তা তো চিরকাল মৌনব্রত পালন করে অনায়াসে দিন কাটিয়ে দিতে পারবে কিন্তু রেহবার? ওর পক্ষে এভাবে দিন পার করা অসম্ভব। একটা রাত কেটেছে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে৷ বাকি দিনগুলো এহন যন্ত্রণা ভোগ করার কথা ভাবলেই শ্বাস আটকে যাবার যোগাড়।
রেহবারকে দেখে গুলিস্তা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলো। ও নিশ্চয়ই এখনো ব্রেকফাস্ট করেনি। শুকনো মুখে বসে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। সকালের অনেকটা পেরিয়ে গেছে৷ ওর নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে৷ তাই বললো,
- ফ্রেশ হয়ে আসছি।

সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে রেহবার নিজের ভাবনা চিন্তায় নিজেই অবাক হলো৷ সে এখনো গুলিস্তার খাওয়া নিয়ে ভাবছে। এতোকিছুর পরেও মেয়েটার জন্য মন উগ্রীব হয়ে উঠছে। কখন এতোটা ভালোবেসে ফেললো ওকে!

জোর করে খাবার টেবিলে বসলেও এখন রেহবারের মেজাজের পারদ তিরতির করে উপরে উঠে যাচ্ছে। গুলিস্তা অন্যসব দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই নাস্তা খাচ্ছে, আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে৷ অথচ রেহবারের মুখে সব বিস্বাদ ঠেকছে। ওকে অশান্তির সাগরে ফেলে দিয়ে একটা মানুষ এমন আয়েশ করছে, ভাবতেই সারা গা জ্বালা করে উঠলো। নাস্তার প্লেট সামনে থেকে সরিয়ে টেবিলে দু হাত রেখে লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো। কখনো এমন কথা মুখে আনতে হবে, স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। তবুও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বলতেই হচ্ছে।
- তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং বুঝার চেষ্টা করবে। আমার বিনীত অনুরোধ, সব বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকবে না।

হে সখাWhere stories live. Discover now