12

27 1 0
                                    

কড়া শাসনে কঠোর নিয়মতান্ত্রিক জীবন কেটেছে গুলিস্তার। বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ার সুবাদে বড়দের সকল ধরনের আদেশ উপদেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকতো। রাতে খাওয়ার পর সোজা বিছানায় যেতে হবে এবং খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এমনি আদেশ ছিলো গুলিস্তার মায়ের। একটুখানি দেরী হওয়া মানে সেদিন কপালে ঝাড়ুর বারি আর গালাগালি জুটবে নিশ্চিত। দিনের পর দিন প্রচেষ্টা করে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস রপ্ত হয়ে গিয়েছে। আজ বহু বছর পর সেই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটিয়ে সকাল নয়টার দিকে গুলিস্তা চোখ মেলে পিটপিট করে চাইলো। ঘরের জানালার পর্দা সরানো হয়নি তখনো। তবুও তেজি সূর্যের প্রখর রোদ জানালা ভেদ করে গুলিস্তার চোখে এসে পরলো। মাথার ভেতর ভীষণ যন্ত্রণা। মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে৷ খানিকটা নড়েচড়ে উঠতেই অবশ শরীরে নিমিষেই ব্যথা ছড়িয়ে পরলো। ব্যথায় নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার যোগাড়। তীব্র যন্ত্রণায় গুলিস্তার চোখের কোণ ভিজে এলো। হাতের উপর ভর দিয়ে উঠতে চাইলে কব্জির আঘাত নিজের অস্তিত্ব জানান দিলো। যন্ত্রণায় মুখ হতে ‘আহ’ শব্দ বেরিয়ে আসতেই আঘাতপ্রাপ্ত হাত দুটো দিয়ে মুখ চিপে ধরলো। যতোই কষ্ট হোক, আর্তনাদ করা বারণ। দীর্ঘদিন এমন আঘাত না পাওয়ায় সহ্য ক্ষমতা হয়তো একটু কমে গিয়েছে৷ এজন্য একটু আঘাতেই জ্ঞান হারিয়ে গেলো। দাতে দাত চিপে ব্যথা সহ্য করে উঠার চেষ্টা করতেই শক্তপোক্ত দুটো হাত ওকে থামিয়ে দিলো।
- উঠো না। রেস্ট নেও।

গুলিস্তা বাধ্য মেয়ের মতো থেমে গেলো। ওকে বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া করে বসিয়ে দিয়ে অপরপ্রান্তে বসলো রেহবার। দুজনের কেউ কোনো কথা বলছে না। গুলিস্তা তার স্বভাব অনুযায়ী চুপচাপ থাকলেও ঠিকই চেয়ে রইলো রেহবারের দিকে৷ কিন্তু রেহবার? সে তো নিজ কৃতকর্মে এতোটাই লজ্জিত যে গুলিস্তার দিকে তাকানোর সাহসটুকুও পাচ্ছে না।
মাথা নিচু করে স্যুপের বাটি এগিয়ে দিলো গুলিস্তার দিকে।

রাতভর গুলিস্তার পাশে বসে থেকে ওর সেবা যত্ন করেছে৷ শেষরাতের দিকে মেয়েটার গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছিলো। শারীরিক ব্যথার প্রতিক্রিয়া স্বরুপ সেই জ্বরের মাত্রা নেহাৎ কম ছিলো না৷ ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে অনবরত জলপট্টি দেওয়ার কারণে ভোরের দিকে জ্বর  কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিলো। গুলিস্তা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে রেহবার ফিরে গিয়েছিল নিজের ঘরে। ঘর গুছিয়ে সোজা কিচেনে চলে যায়। নিজের জন্য এক কাপ ব্ল্যাক কফি বানিয়ে তাতে চুমুক দেয়। সারারাত জেগে থাকার ফলে মাথা ধরেছিলো। ক্যাফেইনের প্রভাবে তা ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে। ফ্রিজ হতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করে বেশ সময় নিয়ে গুলিস্তার জন্য স্যুপ তৈরি করে নিলো৷ তা নিয়ে ঘরে এলে দেখতে পেলো গুলিস্তা জেগে গেছে।

হে সখাWhere stories live. Discover now