45

22 0 0
                                    

তিতানের বয়স যখন ছয় মাস, গুলিস্তা ও রেহবারকে অকূল দরিয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে আম্বিয়া খাতুন ফিরে গেলেন রাহিলের কাছে। ছুটি পেয়ে দেশে এসেছিলো রাহিল। একমাস থেকে মাকে নিয়ে ফিরে গেছে। গুলিস্তা অবাক হয়ে দেখেছিলো, মাত্র কয়েকদিনে রাহিলের সাথে রিনাতের কী দারুণ সখ্যতা গড়ে উঠেছে! অথচ সে মা হয়েও ছেলের সাথে স্বাভাবিক হতে পারে না। সারাক্ষণ ভয় কাজ করে, এই বুঝি ব্যথা দিয়ে ফেলবে। এই বুঝি ওর দ্বারা ছেলের কোনো ক্ষতি হয়ে গেলো।
আম্বিয়া খাতুন যাওয়ার আগে নিজের ঘরে আসবাবপত্র সরিয়ে সেটাকে রিনাতের খেলার ঘর বানিয়ে দিয়ে গেছেন। পুরো ঘরে কোনো ফার্নিচার নেই। ফ্লোরের উপর তোষক বিছিয়ে বিছানা পাতা। ঘর জুড়ে রিনাতের খেলনা ছড়ানো। রিনাত মাত্রই হামাগুড়ি দিতে শিখেছে তাই এই ব্যবস্থা। ফাকা ঘরে সে যেনো অবাধে চলাচল করতে পারে। গুলিস্তা বলে গেছেন, তুমি শুধু ছেলের পাশেপাশে থেকো। সময়মতো খাইয়ে দিও। বাইরের খাবার কি কি খাওয়াবে, কীভাবে খাওয়াবে আমি দেখিয়ে দিবো৷

দিনের বেশিরভাগ সময় এই ঘরের বন্ধ দরজার  ভেতর কেটে যায় মা ছেলের। রিনাত আপনমনে খেলে আর তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে৷ কখনো সখনো ফিসফিসিয়ে ডাকে, তিতান?
রিনাত খিলখিলিয়ে হাসে। মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে আসে মায়ের কাছে। গুলিস্তার চোখ মুখ ছুয়ে ডাকে, মাম্মাম, মাম্মাম।

আধো আধো বুলিতে যতোবার মাম্মাম ডাকে গুলিস্তার চোখ ততোবার সিক্ত হয়ে উঠে। মা ছেলের এই লুকোচুরি খেলা চলে বন্ধ দরজার আড়ালে। এসব খবর রেহবার জানে না। ও বেচারা সারাদিন অফিসে বসে চিন্তা করে, না জানি ছেলেটা একলা কি করছে! ঘরে ফিরে কোনো রকম পোষাক পালটে ছেলেকে নিয়ে আবার ছুটতে হয় বাগানে। প্রতিদিন নিয়ম করে বাবা-ছেলে এক ঘন্টা সময় কাটায় বাড়ির বাগানে। রেহবার পারলে সারাদিন ছেলের সাথে সময় কাটায়। কিন্তু সেটা যেহেতু সম্ভব হয় না, তাই অফিস থেকে ফিরে পুরোটা সময় ছেলের কাছাকাছি থাকে। সেই সময়টা গুলিস্তা রান্না করে, ঘর গুছায়, অন্যান্য যাবতীয় কাজ করে।

রিনাতকে কোলে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় যথারীতি আজকেও রেহবার প্রস্তাব দিলো,
- তুমিও চলো আমাদের সাথে।
- নাহ। আমার কাজ আছে। তোমরা যাও।
- ছেলেকে একটু সময় দেও৷ এমন চলতে থাকলে ছেলে ভুলেই যাবে ওর মাকে।

হে সখাWhere stories live. Discover now