29

25 2 0
                                    

আজকাল কোনো এক অমোঘ টানে রোজ বিকেলে গুলিস্তা ঘর ছাড়ে। বাড়ির পাশে সমুদ্র তীরে হাঁটতে যায়। নিজস্ব ব্যস্ততা থাকায় রেহবার ওকে সময় দিতে পারে না। তবে কড়া নির্দেশ জারি করা আছে, মোবাইল যেনো সবসময় সাথে থাকে এবং বেশি দূরে না যাওয়া হয়। বেশি দূরে যাওয়ার অবশ্য প্রয়োজনও হয় না। প্রথমদিনের মতোই সমুদ্রতীরের কিটকটে বসে রানুর সাথে গল্প করে গুলিস্তা৷ কখনো একটু হেঁটে বেড়ায়৷ যে মেয়েটির থেকে সে এতোদিন পালিয়ে বেড়িয়েছিলো, কেনো যেনো ওর কাছেই ছুটে আসে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ওর কথা শোনে। রানুর রিনরিনে কন্ঠের সরল, সহজ কথাগুলো শুনতে গুলিস্তার ভীষণ ভালো লাগে। এ কথা কিন্তু গুলিস্তা কাউকে জানায়নি৷ এমনি রানুকেও নয়। সেদিনের পর রানুর সাথে আরেকবার দেখা করার প্রত্যাশা নিয়ে সাগরপাড়ে এলোমেলো হাঁটাহাঁটি করছিলো সে। হঠাৎ করেই আবার সামনে চলে এলো রানু। বিরক্ত হওয়ার ভান করে সেদিন গুলিস্তাই প্রথম কথা বলেছিলো,
- আপনি আজকেও আমার পিছু নিয়েছেন?

বিপরীতে রানু শুধু তার চিরপরিচিত হাসিটি ফিরিয়ে দিয়েছিলো।
এরপর থেকে রোজ তাদের দেখা হয়, কথা হয়। রেহবারের সাথে চুক্তি হয়েছিলো, প্রথম কয়েকমাস সপ্তাহে একদিন কাউন্সিলিং করানো হবে। এরপর গুলিস্তার অবস্থার উন্নতি হলে সেটি সপ্তাহ পেরিয়ে মাস করা হবে। কিন্তু এখন রানু নিজেই রোজ বিকেলবেলা এক ঘন্টা ড্রাইভ করে ছুটে আসে হলিউড বীচে৷ ডা. রুবাইয়া রানু নিজের প্রফেশন থেকে বেরিয়ে এসে একজন বাঙালি ঘরের সাধারণ মেয়ে রানু হয়ে উঠেছে। গুলিস্তার প্রতি স্নেহ থেকে নাকি নিজ দেশের মানুষের প্রতি মায়ার কারনে রানু এতোটা আন্তরিকতা দেখাচ্ছে সে জানে না। শুধু জানে এই মেয়েটির সাথে কথা বলতে তার ভীষণ ভালো লাগে। প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে ওদের দুজনের প্রতিদিন কথা হচ্ছে তবুও গুলিস্তা নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেনি৷ পুরোটা সময় রানু নিজেই কথা বলে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে শোনায় গুলিস্তাকে। ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে ওর সামনে৷ রানু চেষ্টা করছে গুলিস্তা নিজে থেকে নিজের সমস্যাটি বুঝুক এবং সেটি নিয়ে রানুর সাথে কথা বলুক। রোগী যতোক্ষণ নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে চাইবে না, রোগ হতে মুক্তি পেতে চাইবে না ততোক্ষণ কোনো চিকিৎসকের সাধ্য নেই তাকে সুস্থ করে তোলে। যেকোনো চিকিৎসায় রোগীর নিজের চেষ্টা এবং বিশ্বাস মুখ্য ভূমিকা পালন করে৷ গুলিস্তা হয়তো নিজের সমস্যাগুলো বুঝতে পেরেছে তাই তো আগ্রহ নিয়ে রানুর কথা শোনো। আরও গভীরভাবে বুঝতে চায়৷ কিন্তু নিজের সমস্যার কথা না স্বীকার করছে, আর না সাহায্য চাচ্ছে। তাই তো বাধ্য হয়ে রানু নিজে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চাইলো।

হে সখাWhere stories live. Discover now