35

23 0 0
                                    


দরজা খুলে দিতেই গুলিস্তার হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো। যেখানে উঁকি দিলো হতভম্বতা। ওর গোল গোল চোখ দুটো রেহবারের ভীষণ হাসি পেলো। সামান্য হেসে বলল,
- দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভেতরে ঢুকতে দিবে না?

গুলিস্তা সরে দাঁড়িয়ে রেহবারকে জায়গা করে দিলো। এক হাতে পাখির খাচা অন্য হাতে অফিসের ব্যাগ হাতে নিয়ে ওভাবেই গুলিস্তা জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।

গুলিস্তা তখনো ভ্রু কুচকে রেহবারের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের ভাষায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর রেহবার দিলো না। উল্টো নিজেই এক ভ্রু উঁচু করে দুষ্টু হেসে বললো,
- কি? কিছু বলতে চাও?
- আপনার হাতে ওটা কি?
- পাখি।

এমনভাবে বললো যেনো, খাচায় ভরে পাখি নিয়ে আসা খুবই স্বাভাবিক কাজ। গুলিস্তা খানিক বিরক্ত হলো। কোমড়ে দু হাত রেখে জানতে চাইলো,
- পাখি নিয়ে এসেছেন কেনো?
- তোমার জন্য।
- আমি পাখি দিয়ে কি করবো?
- চিন্তা করে দেখলাম, সারাদিন বাড়িতে একা থাকতে থাকতে তুমি বোর হয়ে যাও। আমি অফিসে ব্যস্ত থাকি। তোমাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। তোমাকে আমার সাথে অফিস যেতে বলেছি, কিন্তু সেটা তোমার পছন্দ না। তাই অনেক ভেবে চিন্তে পাখি নিয়ে এলাম। এটা যেনো তেনো কোনো পাখি নয়। পৃথিবীর অন্য সব পাখিদের তুলনায় এই পাখি সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। এর নাম গ্রে পেরোট বা ধূসর তোঁতা। একজন পাঁচ বছরের শিশুর বুদ্ধিমত্তার  সমান এই তোঁতার বুদ্ধিমত্তা। আমাদের একটা বাচ্চা থাকলে ওর সাথে তোমার সময় কেটে যেতো। কথা বলার সঙ্গী হতো। কিন্তু এই মুহূর্তে পাঁচ বছরের বাচ্চা তোমাকে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে অনেক লেনথি প্রসেস। তাই এর বিপরীতে তোঁতা নিয়ে এসেছি।

গুলিস্তা চোখ দুটো বড় করে তাকালো খাঁচার ভেতর শান্ত হয়ে বসে থাকা পাখির দিকে। কেমন ড্যাব ড্যাব করে গুলিস্তার দিকে চেয়ে আছে। যেনো সে বুঝে গিয়েছে , ওকে গুলিস্তার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। পাখির দিকে তাকিয়ে থেকেই গুলিস্তা বললো,
- পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা ঠিক নয়।
- এখন ছেড়ে দিলে উড়ে চলে যাবে। তোমার সাথে ভাব জমে গেলে তখন ছেড়ে দিও। একবার মনে ধরে গেলে তাকে সহজে ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। সেটা মানুষ হোক, কিংবা পাখি। অভ্যাসে পরিণতে হয়ে গেলে আর চিন্তা নেই। হেলাফেলা করলেও সে তোমাকে ছেড়ে যাবে না।
- ধূসর তোঁতা।

হে সখাWhere stories live. Discover now