এলোমেলো চিন্তাদের মাথায় নিয়ে রেহবারের দিন কেটে যায়। নির্ঘুম রাত জেগে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয় ঘুমন্ত গুলিস্তার দিকে৷ লোকে শুনলে হয়তো বলবে, সমস্যা কোথায়? এতো চিন্তা ভাবনা না করে সেভাবে চলছে চলুক না। ঘরের বউ যতো চুপচাপ থাকে ততোই ভালো। মান অভিমান করছে না, রাগ-অভিযোগ কিছুই করছে না৷ এতো মশাই সাত কপালের ভাগ্য। এমন বউ সবাই চায়, আর তুমি পেয়েও সুখী নও। উল্টো আকাশ কুসুম চিন্তা করে মনের অশান্তি বাড়াচ্ছো। কিন্তু রেহবার তো এমন চায়নি। সে নিজে একজন প্রানোচ্ছ্বল মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই নিজের মতোই একজন জীবনসঙ্গীর কামনা সে করে। নিজের মতো না হোক, অন্তত আর পাচটা স্বাভাবিক মেয়ের মতো যদি হতো তবুও রেহবারের আপত্তি ছিলো না। যারা এমন বুলি কপচায় তারা নিজের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর থেকে এমন রোবোটিক বিহেভিয়ার পেলে রেহবারের কষ্টটা বুঝতো। একজন মানুষ তার আশেপাশে আছে, কিন্তু আচরণ এমন করছে যেনো সে নেই। রেহবারের উপস্থিতি তাকে খুব একটা প্রভাবিত করে না। পাশে থাকা, না থাকা খুব একটা ভাবায় না। এমন অবহেলা মেনে নেওয়া যায়?
রেহবার চায় গুলিস্তা তাকে অনুভব করুক, যেমনটা একজন স্ত্রী তার স্বামীকে করে৷ তারও তো ইচ্ছে করে অফিস থেকে ফিরে স্ত্রীর উদগ্রীব মুখের দর্শন পেতে৷ সেও চায় বাড়ি ফিরতে দেরী হলে গুলিস্তা একটা মেসেজ কিংবা একটা কল দিয়ে ওর খোঁজ নিক। হাস্যকর হলেও সত্যি, গুলিস্তা আজ পর্যন্ত ওর ফোনে কোনো কল বা মেসেজ করেনি৷ ফোন নাম্বারটা সেভ করা আছে কিনা সেটাই সন্দেহ হয়৷
বিছানার একপাশে গভীর ঘুমে মগ্ন গুলিস্তা। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ঘুমাচ্ছে। ও খুবই পরিপাটি হয়ে ঘুমায়। ঘুমের মাঝে একটুও নড়াচড়া করে না৷ যেপাশে শোয়, ঘুম থেকে জেগে নিজেকে সেপাশেই পায়। রেহবার নিজেও বেশ পরিপাটি ছিলো। কিন্তু আজকাল নির্ঘুম রাত কাটার দরুণ, রাতভর এপাশ ওপাশ করতে থাকে। গুলিস্তার কপালে আলতো চুমু একে রেহবার মুচকি হেসে বিড়বিড় করলো,
- রোবট একটা।আর ঘুম হবে না জেনে বিছানা ছাড়লো। মাথাটা দপদপ করছে। কফি খাওয়া দরকার৷ কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে বাড়ির বাইরে চলে এলো৷ ভোরের পরিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগতেই শরীর ও মন দুটোই চনমনে হয়ে উঠলো। শীতের আগমনের বার্তা নিয়ে এসেছে সকালের মৃদু বাতাস। গা কেমন শিরশির করে উঠে। পাতলা সুতি পাঞ্জাবি গায়ে এমন বাতাস ঠান্ডা ছড়িয়ে দিলো। গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে রেহবার বাগানের মধ্যে খানিকক্ষণ পায়েচারি করে কাটিয়ে দিলো।
YOU ARE READING
হে সখা
Romanceএকবার দেখেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো রেহবার ও গুলিস্তা। বিয়ের পর সব ঠিকঠাক চললেও গুলিস্তার নির্লিপ্ততা, অস্বাভাবিক ঠান্ডা আচরণ রেহবারের মনে গাঢ় সন্দেহের জন্ম দেয়। ভালো মন্দ সব পথ অবলম্বন করে মূল কারণ উদ্ধারের চেষ্টায় সামনে আসে গুলিস্তার অতীত। যা...