43

20 0 0
                                    

শহর থেকে দূরে একটি খামারবাড়ি। কাঠের তৈরি ছোট এক কামরার একটি দোতলা বাড়িটিকে ঘিরে বিশাল বাগান। ঘাট বাধানো পুকুরের পাশে ফাঁকা স্থানে ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। সকালের ঝড় বৃষ্টিতে সাজানো গোছানো স্টেজের কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। শেষ মুহুর্তে  টিমের লোকজন এসে খুব অল্প পরিমাণ জিনিসপত্র উদ্ধার করতে পেরেছে।
দোতলার চারকোনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই ধ্বংসস্তুপের দিকে তাকিয়ে আছে রেহবার। লিতুন এসে সন্তপর্ণে পাশে দাড়ালো। ধীর কন্ঠে ডাকলো,
- স্যার?
- ওরা বেরিয়েছে?
- হ্যাঁ। 
- কতোক্ষণ লাগবে?
- বৃষ্টির কারনে রাস্তায় কাদা পানি জমেছে। একটু সময় লাগবে।
- ফোন করেছিলে?
- সম্ভব নয়নি। নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। তবুও আমি ট্রাই করছি। আকাশ পরিষ্কার হলে এইখানে সামান্য নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে।
- ওরা না আসা পর্যন্ত কোনো কাজ নেই। সবাইকে রেস্ট নিতে বলো। জিনিসপত্র চলে এলে আবার নতুন করে সবকিছু সাজিয়ে ফেলতে হবে।
- স্যার, আবার যদি ঝড় হয়?
- আবহাওয়াবার্তা তো এমন কিছু বলছে না। আকাশও পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। আরেকটু অপেক্ষা করি। বৃষ্টি থেমে গেলে বুঝা যাবে।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বন্ধ হতে হতে দুপুর গড়িয়ে গেলো। কালো মেঘ সরে যেতেই ঝলমল করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিলো তেজী সূর্য। নিজের তাপের দাপটে কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টির পানি শুষে নিয়ে চারপাশ ঝরঝরে হয়ে উঠলো। হাতে হাত লাগিয়ে সবাই নেমে পরলো অন্তিম মুহুর্তে শুরু থেকে প্রস্তুতি নিতে। ব্যয় দ্বিগুণ হলেও আফসোস নেই। লাভ-লোকসান মিলিয়ে ব্যবসা চলে। লাভ হলে যেমন খুশি হয়ে সামনে এগিয়ে যাই, তেমনি লোকসান হলেও মন খারাপকে সঙ্গী করে এগিয়ে যেতে হয়। রেহবারের কাছে এই মুহুর্তে নিজের দায়িত্ব পালন করাটাই মূখ্য বিষয়৷ প্রতিকূল আবহাওয়ায় কারো হাত নেই। ক্লায়েন্টের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট সাপোর্ট পাচ্ছে৷
নতুন করে সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে নিতে বিকাল গড়িয়ে গেলো। লাইটিং এর কাজ ইলেকট্রিশিয়ানকে বুঝিয়ে দিয়ে ওরা ফিরে এলো দোতলার ঘরটিতে৷ বাকি কাজ রাত জেগে করতে হবে। সেগুলো ফিল্ড মেম্বাররা সামলে নিবে। এই মুহুর্তে ডিপার্টমেন্টের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আর কোনো কাজ নেই। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ফোনে মিসড কল এলার্টের মেসেজ আসলো।
আননোন নাম্বার হলেও সকল ধরনের ফোনকল রেহবারের জন্য জরুরি। নেটওয়ার্কের কারনে হয়তো কল আসেনি তাই মিসড কল এলার্ট এসেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে কল ব্যাক করলো।
ওপাশ থেকে কর্পোরেট ভোকালিস্ট ধরনের এক নারী কন্ঠ জানান দিলো সে শহরের নামকরা একটি হাসপাতাল থেকে বলছে৷
রেহবার খানিকটা নড়েচড়ে বসলো। বাড়ি থেকে দূরে থাকাকালীন হাসপাতাল থেকে আসা যেকোনো ধরনের ফোনকল সর্বপ্রথম বিপদের হাতছানি দেয়।
নিজের পরিচয় দিয়ে রেহবার জানালো কিছুক্ষণ আগে এই নাম্বার থেকে কল এসেছিলো।

হে সখাWhere stories live. Discover now