19

34 0 5
                                    


হিমালয় পর্বতের কাছাকাছি হওয়ায় উত্তরবঙ্গে শীতের আগমন ঘটে ডিসেম্বরের শুরুতে। দূর পাল্লার বাসগুলো সারারাত যাত্রা করে গন্তব্যে পৌছায় ভোরবেলা৷ বাস থেকে নেমে যাত্রীদের থাকে ঘরে ফেরার তাড়া। যানবাহনের সংকটের কারনে এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে একটু বেশি অংকের ভাড়া আদায় করে নেওয়া যায়। শীতের ভোরে লেপের নিচের আরামদায়ক ঘুম ছেড়ে বদিয়ার তার ভ্যানগাড়ি নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে বসে আছে। গায়ে তার ফুটপাত থেকে কেনা মোটা সোয়েটার। খুব একটা শীত লাগছে না। তবুও বউটা ঘর ছাড়ার সময় চাদর হাতে ধরিয়ে দিয়েছে৷ আজকে বাসে তেমন একটা যাত্রী নেই৷ যারা নেমেছিলো, তারা ইতোমধ্যে অটোতে করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। বদিয়ার হতাশ হয়ে ভ্যানগাড়ির প্যাটেলে পা দিয়ে চাপ দিতেই আবছা কুয়াশায় একটি নারী অবয়ব দেখতে পেলো। এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টিতে বাহনের খোঁজ করছে। আঁধারে আশার আলো দেখতে পেয়ে ভ্যান রেখে বদিয়ার সেদিকে এগিয়ে গেলো। নারী অবয়বটি দৃষ্টিসীমায় আসতেই পরিষ্কার হলো নারীটির মুখের আদল। ওকে চিনতে পেরে বদিয়ার অবাক হয়ে শুধালো,
- তুই আকবার বাড়ির ছোট মাইয়া না?

গুলিস্তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ধীরেসুস্থে উত্তর দিলো,
- হ্যাঁ৷
- শুনছিলাম তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। অনেকদিন পর বাপের বাড়ি আইলি। একা আসছিস? জামাই সাথে আসেনি?
- নাহ।
- বাড়ি যাবি তো? আয়, আয়। আমি পৌছায় দেই।

গুলিস্তার হাত থেকে কাপড়ের ব্যাগটি নিজের হাতে নিয়ে বৃদ্ধ বদিয়ার অতি উৎসাহে ভ্যানগাড়িতে রেখে দিলো। ভ্যানের একপাশে বসে গুলিস্তা শীতে কাঁপছিলো। এদিকে এতো ঠান্ডা পরেছে কে জানতো! মনে হচ্ছে অন্য দেশে চলে এসেছে। বদিয়ার তার ব্যাগ হতে নিজের চাদরটা বের করে পরম যত্নে গুলিস্তার গায়ে জড়িয়ে দিলো। মেয়েটাকে দেখলেই নিজের মেয়ের কথা মনে পরে যায়৷
- তুই এখনো চুপচাপ থাকিস! শ্বশুরবাড়ির লোক কিছু বলে না?

ফাঁকা রাস্তায় ভ্যানগাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে চুপচাপ থাকতে ইচ্ছে করে না। কারনে অকারণে,  পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে আলাপ করতে বসে যায় বদিয়ার।
- মাগো, পরেরবাড়িতে টিকে থাকা অনেক কষ্ট৷ এতো সহজ সরল হইলে, লোকে তোরে পায়ের তলায় পিষ্যা চইলা যাবে৷ তোর মায়ে কেন যে এমনে হুট কইরা বিয়া দিয়া দিলো। শুনলাম, মেলা দূরেই নাকি শ্বশুরবাড়ি?

হে সখাWhere stories live. Discover now