13

27 1 0
                                    

মনের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধলে সেটা সংক্রমণ রোগের মতো ছড়িয়ে পরতে থাকে। রেহবার নিজের সাথে নিজে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ করে হাঁপিয়ে উঠেছে। ওর ভরসার একমাত্র স্থান, মা। তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই ব্যাপারে আম্বিয়া খাতুনের সাথে কথা বলবে। কিন্ত সে তো নিজেই জানে না, গুলিস্তার সাথে তার কি সমস্যা হচ্ছে। বিবাহিত জীবনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার অন্য কাউকে জানানোর কাজটি সে করতে পারবে না। হোক অপরপাশের ব্যক্তিটি তার মা। তবুও সব কথা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাই রেখে ঢেকে যতোটুকু বলা সম্ভব, সেইটুকুই বলবে।

ছেলের উদাস চেহারা দিকে তাকিয়ে আম্বিয়া খাতুন শংকিত হলেও স্বাভাবিকভাবেই রেহবারকে প্রশ্ন করলেন,
- তুমি ঠিক আছো? অসুস্থ মনে হচ্ছে।

রেহবার খানিকটা হাসার চেষ্টা করলো, কিন্তু সেই হাসি তার চেহারাতে আরও বেশি করুণ দেখালো।
- আমি ঠিক আছি।
- তাহলে মুখ এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেনো?

মায়ের মন সন্তানের অনুভূতি জানতে বেশি সময় নেয় না। সন্তান চাইলেও মায়ের থেকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। মা যদি পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় কি হয়েছে জানতে চায়, সন্তান তার ভয়ংকর অপরাধের কথাও স্বীকার করে ফেলতে পারে। রেহবার ফোনের স্ক্রীনে ভেসে থাকা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মনের সকল কষ্ট নিয়ে ডাকলো,
- মা?

আম্বিয়া খাতুনের বুকটা এক নিমিষেই হু হু করে উঠলো। রেহবার উনার প্রথম সন্তান। মাতৃত্বের প্রথম অনুভূতি। ছেলের থেকে দূরে থাকতে সারাটা ক্ষণ মন পুড়ে। তিনি অস্থিরতা বোধ করলেও নিজেকে শান্ত রেখে জানতে চাইলেন,
- কি হয়েছে রেহবার? কোনো সমস্যায় পরেছ?

রেহবার অনেক দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করলো,
- তোমার মনে হয় না গুলিস্তার সাথে আমার বিয়েতে অনেক তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি? কোনো খোঁজ খবর নিলাম না, কোনো কথাবার্তা হলো না। দেখা হলো, বিয়ে হলো।
- পরিস্থিতিই এমন ছিলো। কিন্তু এতোদিন পর এসব কথা আসছে কেনো? বিয়ে যেভাবেই হোক, এখন তো আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ভালোই চলছে। তাহলে এসব বলছো কেনো?
- কিছু একটা ঠিক নেই মা। বিদায়ের সময় দেখেছো, গুলিস্তার বাড়ির লোকজনের আচরণ কেমন অদ্ভুত ছিলো। যেনো মেয়ে বিদায় করে দিলেই বেঁচে যায়। বিয়ের পর রীতিমতো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। মেয়ে কেমন আছে, তার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভালো কিনা -এসব নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ও বাড়ির কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না। বিয়ের পর গুলিস্তার ছোট ভাই দু একবার কল দিয়ে খোঁজ নিয়েছিলো। এখন তো সেটাও করে না।
- তুমি হঠাৎ ওর বাবার বাড়ির লোকজনদের নিয়ে চিন্তা করছো কেনো? শ্বশুরবাড়ির আদর-আপ্পায়ন মিস করছো? তোমার কথাবার্তা টিপিক্যাল বাঙালিদের মতো শোনাচ্ছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন খোঁজ নেয় না, দাওয়াত দেয় না, কোনো উপহার পাঠায় না।
- তোমার কি সত্যি আমাকে এমন মনে হয়? এসবের অপ্রয়োজনীয় রীতিনীতি আমার কখনোই পছন্দ ছিলো না।
- তাহলে এসব নিয়ে এতো ভাবছো কেন? তোমার বুঝা উচিত, উনারা ব্যস্ত মানুষ। পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে সবার দিনরাত ছোটাছুটি করে। আপন বলতে আছে গুলিস্তার মা। উনি বৃদ্ধ মানুষ। বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে বসে কাটায়। সেই বগুড়া থেকে সিলেট এসে মেয়ের খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব নয়।
- কল দিয়েও তো খোঁজ নেওয়া যায়।
- পুরনো আমলের মানুষজনের প্রযুক্তি ব্যবহারে একটি আধটু অনীহা থাকে। তাছাড়া সবাই যে তোমার আমার মতো করে ভাববে সেটা তো নাও হতে পারে। উনারা হয়তো মেয়ের বিয়ের পর তার সাথে যোগাযোগ কম রাখে। অনেকে জায়গায় মেয়েদের পরের বাড়ি সম্পদ হিসেবেই গণ্য করা হয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত তাকে পরের আমানত হিসেবে দেখভাল করে। বিয়ের পর তাকে নিয়ে আর চিন্তা করে না। দায়িত্ব থেকে মুক্তি মিলেছে এই ভেবে নিজের জীবনে এগিয়ে যায়।
তোমার বিয়ে হয়েছে গুলিস্তার সাথে, আমরা বাড়ির বউ করে ওকে এনেছি। ওর পুরো পরিবারের দায়ভার নিয়ে সে আসে নি। তাই অন্যদের আচরণের প্রেক্ষিতে ওকে বিচার করবে না।
- তোমার গুলিস্তাকে অস্বাভাবিক মনে হয় না?

হে সখাWhere stories live. Discover now