52

25 0 0
                                    


আজকাল নিনাতের বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে না৷  সেদিনের ঘটনার সপ্তাহখানেক কেটে গেছে৷ সবকিছু চলছে আগের মতোই। শুধু গুলিস্তা নিজেকে ঘরে আটকে ফেলেছে। আজকাল খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয় না। রান্নাবান্নার কাজ সামলাচ্ছে মালা। রাঁধে ভালো তবে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ পাওয়া যায় না। নিনাতের টিফিনবক্সে একেকদিন একেক খাবার আসে৷ মজাদার প্যানকেকস, স্ট্রবেরি সিরাপ, বার্গার, পিৎজা, চিকেন শর্মা আরও কতো কি! যেগুলো মুখে তুলতে ইচ্ছে করা না নিনাতের। খেতে বসলেই ভাতের জন্য মন আনচান করে। লজ্জায় ভাতের কথা বলতে পারে না নিনাত। কোন মুখে বলবে? এই টিফিন নিয়ে কতো কাহিনী হয়ে গেলো! তাই স্কুল থেকে ফিরেই ভাতের প্লেট নিয়ে খেতে বসে যায়৷ দুপুরের সব পদ ওর জন্য আলাদা করে তুলে রাখা হয়। গরম করে নিয়ে আসে মালা। নিনাত জানে, মায়ের নির্দেশেই মালা এসব করে। সেদিনের আচরণের জন্য আফসোস হয় কিন্তু ক্ষমা চাইতে লজ্জা লাগে৷

বাড়িটা আজকাল মৃত্যুপুরীর মতো অদ্ভুতুরে লাগে৷ পুরোটা দিন ব্যালকনিতে বসে কাটায় গুলিস্তা। গাছে পানি দেয়, পরিচর্চা করে, দোলনায় বসে বই পড়ে কিন্তু হলরুমে আসে না। আগে হাঁটতে চলতে মানুষটাকে চোখের দেখা তো দেখা যেতো। কিচেনে রান্না করছে, ডালে বাগাড় দিতেই কী সুন্দর ঘ্রাণ! ড্রয়িংরুমের সোফা, টেবিল পরিষ্কার করছে। কাপড় দিয়ে ঝাড় দিতেই ধুলো এসে নাকে লাগে। সন্ধ্যায় ওরা দুই ভাইবোন পড়তে বসে। ডাইনিং টেবিলে বসে সবজি কাটতো গুলিস্তা। এখন সেসব স্মৃতি বড্ড পোড়ায় নিনাতকে। পাশে না বসুক, জীবনে মায়ের উপস্থিতি তো ছিলো। জোরালো সেই অনুভূতি এখন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
খাবারটাও এখন আর ডাইনিং টেবিলে বসে খায় না। গুলিস্তাকে ছেড়ে একা খেতে ওদের সবার কষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি মনমরা থাকে রেহবার। কোনোরকম দু মুঠো মুখে তোলে। বাচ্চাদের সঙ্গ দিতেই জোর করে খাবার মুখে তোলে ওদের বাবা। সবই বুঝে নিনাত। সন্তান যতো অন্যায় করুক, বাবা কখনো নিজের দায়িত্ব থেকে পিছপা হয় না৷
এই যে এতো ঝামেলার মধ্যেও নিনাতকে স্কুল থেকে ফিরিয়ে নিতে আসতে চেয়েছিলো। নিনাত বারণ করে দিয়েছে। এখন সে বড় হয়েছে। একাই রিক্সা নিয়ে আসা যাওয়া করতে পারবে।

হে সখাWhere stories live. Discover now