38

24 0 0
                                    


গুলিস্তার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে তিতানের সাথে ঝগড়া করে। ঝগড়াটা যদিও একপাক্ষিক। তিতান ওর বাজখাঁই কন্ঠে কিছু একটা ঝকঝক করে বলে, যা দেখে গুলিস্তার মেজাজ বিগড়ে যায়। তবুও সে তিতানকে কথা শেখানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু দুষ্টু পাখিটি নিজের মনের বাদশা। যখন মন চায় কথা শোনে, যখন চায় না তখন গুলিস্তাকে পাত্তাই দেয় না।
সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলে একদিন রেহবার জিজ্ঞাসা করলো,
- তিতানের কি খবর? কথা শিখেছে?
- সে হচ্ছে নবাবজাদা। নিজের মন মর্জি মতো কাজ করে। আমাকে দেখলেই ঝকঝক করতে আরম্ভ করে দেয়। কথা শিখবে কখন?
- চেষ্টা চালিয়ে যাও৷ একটু সময় লাগবে৷

রাতের অবসর সময়ে দুজনে মিলে তিতানের কাছে গেলো৷ নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজের চাপে এই কয়েকদিন রেহবার অনেক ব্যস্ত ছিলো। বাড়িতে ঠিকমতো সময় কাটাতে পারেনি৷ ব্যালকনির পর্দা সরাতেই ওদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে তিতান তার ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে ডেকে উঠলো,
- ফুল, ফুল, ফুল...

গুলিস্তার চোখ পারলে কপালে উঠে যায়। এতোদিন চেষ্টা করেও একটা কথা বলাতে পারেনি৷ আজকে রেহবারকে দেখে কেমন নাটক করছে দেখো। রেহবার ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
- তুমি শিখিয়েছো?

মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানালো গুলিস্তা। সেই প্রথমদিন থেকে সে তিতানকে বলতো, বল তো ফুল।
তিতান কিছু বলতো না৷ ভাব দেখিয়ে নিজের খাঁচায় চলে যেতো। এখন হঠাৎ করে স্পষ্টভাবে ফুল ডেকে অবাক করে দিলো। এড়িয়ে চলার মিথ্যে নাটক করলেও সে গুলিস্তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে।
রেহবার একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়ে তিতানকে বললো,
- ও শুধু আমার ফুল। একদম ফুল নামে ডাকবি না।

এরপর গুলিস্তার দিকে ফিরে বলল,
- অন্য কিছু শেখাও।

গুলিস্তা ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে রইলো। কেউ কথা শুনতে চায় না, কেউ আবার কথা শেখাতে বলে এখন আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। আচ্ছা ঝামেলা হলো তো।

গুলিস্তার নিরন্তর পরিশ্রমে তিতান অনেক শব্দ শিখেছে। ওর সাথে বকবক করতে গুলিস্তার মাথা ধরে যায়। তবুও সে তিতানের সাথে কথা বলে। ব্যালকনির গ্রিলে একটা পোকা এসে বসেছিলো৷ সেটা খপ করে ধরে তিতানের দিকে এগিয়ে দিলো গুলিস্তা৷ পোকাটিকে মুখে পুড়ে বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে তিতান। ওর মখমলের মতো পালকে হাত বুলিয়ে গুলিস্তা বললো,
- এই এক মাসে তোর সাথে যতো কথা বলেছি, আমার সারাজীবনে মনে হয় এতো কথা বলিনি৷ নিজেকে বাচাল মনে হচ্ছে৷

হে সখাWhere stories live. Discover now