49

19 0 0
                                    


বগুড়া থেকে অনেকদিন পর কল এসেছে রেহবারের ফোনে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ মুখো হয় না কেউ। আজকে হঠাৎ দিহানের কল দেখে রেহবার সতর্ক চোখে তাকালো গুলিস্তার দিকে। সবাই তখন নাস্তার টেবিলে খাবার খেতে ব্যস্ত। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। রেহবার সন্তপর্ণে চেয়ার ছেড়ে উঠে আড়ালে চলে গেলো।
সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। টেবিল গুছাচ্ছিলো গুলিস্তা। নিনাতকে পাশে বসিয়ে সোফায় অপেক্ষা করছে রিনাত৷ বাবা ফিরলেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। রেহবার ফিরে এলো দ্রুত পায়ে। ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গুলিস্তার হাত থেকে সবজির বাটি নিয়ে আবার টেবিলে রেখে দিলো। ওটা ফ্রিজে তুলে রাখতে যাচ্ছিলো গুলিস্তা। রেহবারের এমন আচরণে সে অবাক হলো। প্রশ্ন নিয়ে তাকালো রেহবারের দিকে। রেহবার ওর হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নমনীয় গলায় বললো,
- আমাদের বগুড়া যেতে হবে।

ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হলো গুলিস্তার। শেষ কবে বগুড়া গিয়েছিলো মনে করার চেষ্টা করলো। হবে অনেক বছর। রেহবার রাগ করে ওকে বগুড়া পাঠিয়ে দিলো তারপর একদিন হুট করে গিয়ে এক প্রকার তুলে নিয়ে এলো। তারপর আর কখনো ও মুখো হয়নি। গুলিস্তা নিজেও কখনো বগুড়ার নাম মুখে নেয়নি। ভুলেই গিয়েছিলো ওর একটা বাপের বাড়ি আছে। বাড়িতে থাকতে থাকতে একঘেয়েমি লাগলে আশেপাশে কোথাও ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। রিনাতের জন্মের পর আরেকবার ফ্লোরিডাও গিয়েছিলো। তবুও বগুড়ায় কখনো নয়। তাহলে আজ কেনো বগুড়া যাওয়ার কথা উঠলো?
- কেনো?

শুকনো ঢোক গিলে রেহবার বললো,
- দিহান ফোন করেছিলো। তোমার মা অসুস্থ। উনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে৷ তোমাকে দেখতে চাইছেন।

অবস্থা যে খুব একটা ভালো নয়, সেটা আর বলা হলো না। তোমাকে দেখতে চাইছেন, এইটুকু কথাতেই গুলিস্তার ভীত নড়ে উঠলো। হাজার হোক, মা তো। সন্তানের মনের ভেতর মায়ের যে জায়গাটি রয়েছে সেটি কেউ নিতে পারে না। মা বেঁচে না থাকলেও মায়ের সেই জায়গাটি আজন্ম ফাঁকা পরে রয়। আমরা যতোদিন বাঁচি, মনের মধ্যে মায়ের স্নেহ, মমতা প্রত্যাশী সেই জায়গাটুকু বেঁচে রয়।
চোখ না কাঁদলেও গুলিস্তার মন কাঁদলো। তিরতির করে কাঁপলো ঠোঁট। ফুলে উঠলো নাকের ডগা।
ওকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলো রেহবার।
অল্প সময়ের মধ্যে ছোট একটি ব্যাগ গুছিয়ে ফেলে নিনাতকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পরলো বাড়ি থেকে। পিছু পিছু আসছে গুলিস্তা ও রিনাত। মায়ের হাতটি নিজের হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে রিনাত৷ হোক সে হাতের জোর কম, কিন্তু ভরসা আছে অফুরন্ত।

হে সখাWhere stories live. Discover now