20

30 1 0
                                    

সকালে একগাদা মার খেয়ে পেট ভরে গেছে তাই মেয়েটা সকালে আর কিছু মুখে তুলেনি৷ রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকায় শর্মী নিজেও খোঁজ নেওয়ার সময় পায়নি৷ সীমা বেগম নিজেও গোঁ ধরে বসে আসেন, ছেলের সংসারের অন্ন আর মুখে তুলবেন না। শর্মী অনেক অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে দুপুরের দিকে ভাত খাওয়াতে পেরেছে। মাকে সামলে মেয়ের খোঁজ নিতে গিয়ে আঁতকে উঠলো শর্মী। গুলিস্তা গায়ে ভীষণ জ্বর। বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে অনবরত কেপে যাচ্ছে পাতলা গড়নের শরীরটি। লেপ, কম্বলে শরীর মুড়ে দিয়ে সে ছুটলো রান্নাঘরে। গরুর গোশতে বড় আকারে আলু কেটে দিয়ে কষানো তরকারি গুলিস্তার ভীষণ পছন্দ। ঝাল দিয়ে রান্না করে ভাত মেখে নিজে হাতে একটু খাইয়ে দিলো। খালি পেটে ঔষধ খাওয়া যাবে না দেখে কষ্ট হলেও গুলিস্তা খানিকটা খেয়ে নিলো৷ ঔষধ খাইয়ে ঘর ছাড়তেই গুলিস্তা ছুটে গেলে বাথরুমে। পেটের মধ্যে যা ছিলো সবটুকু উগড়ে দিলো। ক্লান্ত শরীরটি টেনে বিছানায় নিয়ে আসার মতো শক্তি অবশিষ্ট নেই। নেহাত শর্মী ছিলো। কোনোরকম ধরে বিছানায় শুইয়ে দিতেই নিদ্রা পথে পাড়ি দিলো গুলিস্তা। দিনভর ছোটাছুটি করে শর্মী নিজেও ক্লান্ত৷ জলপট্টি দেওয়া দরকার কিন্তু শর্মীর দেহ আর সায় দিচ্ছে না। খানিকটা বিশ্রাম দরকার। গুলিস্তার শিয়রে বসে খানিকক্ষণ জিরিয়ে নেওয়া যায়৷

রেহবার যখন বগুড়া পৌছালো, তখন তপ্ত সূর্য ম্লান হতে চলেছে। শীতের আগমনের বার্তা স্বরুপ সূর্যটাও দ্রুত পালাই পালাই করে। তিক্ত অনুভূতি রেহবারের মন জুড়ে৷ আজকে একটা রফাদফা করে তবেই ফিরবে। রেহবার না হয় খানিকটা সময় চেয়ে ওকে বগুড়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এই মেয়ের এতো ভাব যে বগুড়া পৌঁছানোর পর একবার কল দিয়ে জানানোর প্রয়োজনটুকুও মনে করেনি। ভোর থেকে রেহবার ফোনের দিকে চেয়ে ছিলো। গুলিস্তা ঠিকমতো পৌছালো কিনা এই চিন্তায় রাতভর অস্থির ভাবে বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কেটেছে। ভোর পেরিয়ে সকাল হলো, সকাল পেরিয়ে দুপুর। বাধ্য হয়ে রেহবার নিজেই কল দিয়েছিলো। মেয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন যে, ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। রাগে, অপমানে রেহবারের ইচ্ছে করছিলো তখনি বগুড়ায় এসে জোরসে একটা ধমক দিতে।
নিজে ফোন বন্ধ করে রেখে ভাব দেখাচ্ছিলো আর এখন শ্বাশুড়ি-দেবর সবাইকে কল দিয়ে নালিশ করা হচ্ছে। পুরো বংশের রেফারেন্স নিতে পারবে তবুও রেহবারের নিকট মাথা নোয়াবে না। এসব নিয়ে যতোই ভাবছে, ততোই মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
আজকে এখানেই সব সম্পর্ক চুকেবুকে দিয়ে ফিরে যাবে নিজ শহরে। অনেক হয়েছে ধৈর্যের পরীক্ষা।

হে সখাWhere stories live. Discover now