42

20 0 0
                                    

ডেলিভারির ডেট নিকটে চলে এসেছে সেই সাথে বেড়েছে রেহবার ও গুলিস্তার ব্যস্ততা। শেষ মুহুর্তে প্রস্তুতি সেই সাথে সতর্কতা দুটোতেই কমতি নেই৷ মালা আজকাল এ বাড়িতেই থাকে। কিচেনের পাশে একটা ছোট ঘর বদ্ধ পরেছিলো। সেখানেই মালার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। মালা অবশ্য থাকতে চায়নি৷ রেহবার অফিস চলে গেলে গুলিস্তা একা থাকে৷ ব্যস্ততার কারনে আজকাল ঘরে ফিরতে খানিক দেরী হয় রেহবারের। সবদিক বিবেচনা করে শেষমেশ রাজি হয়েছে।
ভারী শরীরের কারনে একপাশে বেশিক্ষণ শুয়ে থাকা সম্ভব হয় না। বিছানার অপরপাশে ল্যাপটপে কি যেনো করছে রেহবার। গুলিস্তাকে অস্থিরভাবে এপাশ-ওপাশ করতে দেখে ল্যাপটপ ছেড়ে উঠে কিচেনে গেলো। কিছু ফল কেটে এনে গুলিস্তার হাতে দিলো। রাত অনেক গভীর হয়েছে। ডিনার করার এতোক্ষণ পরে ক্ষুধা লাগা স্বাভাবিক৷ কয়েক টুকরো ফল মুখে দিয়ে প্লেট সরিয়ে রাখলো গুলিস্তা৷ খেতে ইচ্ছে করছে না। ক্লান্তিতে চোখ নেতিয়ে পরছে কিন্তু ঘুম আসছে না। সবে মাত্র ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলো রেহবার। গুলিস্তাকে আবার শুয়ে পরতে দেখে ওরদিকে তাকালো। হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে গিয়ে পায়ের নিচে থাকা বালিশটি পায়ের ধাক্কায় নিচে পরে গেলো। কোনোকিছু না ভেবে সেটা তোলার জন্য নিচে ঝুঁকতেই যাচ্ছিলো গুলিস্তা। চকিতে রেহবার ছুটে এসে আটকে দিলো। সেই সাথে কড়া স্বরে ধমকে দিলো।
- করছো কি তুমি? বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে নাকি? এই অবস্থায় ঝুঁকতে যাচ্ছিলে কোন আক্কেলে? এতো রাত হয়েছে ঘুমাচ্ছো না কেনো তুমি? চুপচাপ ঘুমাতে যাও।

বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পায়ের নিচে বালিশগুলো ঠিকঠাক রেখে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরলো রেহবার। এদিকে গুলিস্তার ভীষণ মন খারাপ হলো। সে না হয় ভুলেই ঝুঁকতে যাচ্ছিলো, তাই বলে এভাবে বকে দিবে? চোখে ঘুম না আসলে কীভাবে ঘুমাবে? এতোক্ষণ থেকে শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠ ব্যথা হয়ে গিয়েছে। আজকাল পুরো শরীরে ব্যথা অনুভব হয়। বিশেষ করে কোমড়ের নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত। ঘুমাও বলে দিয়েই রেহবারের দায়িত্ব শেষ। এসব প্যারা সামলাতে তো হয় গুলিস্তাকে।
অভিমানে মুখ ফুলিয়ে একপাশে কাত হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলো। রেহবার অবশ্য এতো কিছু ভাবার সময় পায়নি। কাল বাদে পরশু ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। খোলা মাঠে স্টেজ সাজানোর কাজ প্রায় শেষ। কালকে লাইটিং এর কাজ শুরু হবে। অথচ এখন আবহাওয়া বার্তা বলছে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে। এই অসময়ে বৃষ্টি হবে কে জানতো! কোনো ব্যাকআপ প্ল্যান রাখা হয়নি। চিন্তায় রেহবারের মাথা ঘুরছে। টিমের প্রত্যেক ব্যক্তির ঘুম উড়ে গেছে। সবাই রাত জেগে ইনডোর প্ল্যানের কাজ করছে নিজ দায়িত্বে। যদি সত্যি ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাহলে ইনডোরে প্রোগ্রাম এক্সিকিউট করতে হবে। অন্য সব কিছু সামলানো গেলেও অন্তিম মুহুর্তে কোনো কনভেনশন সেন্টার বুকিং করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিচিত সকল স্থানে খোঁজ চালাচ্ছে রেহবার৷ এমন সময় গুলিস্তার ধীমে কন্ঠ শোনা গেলো।
- রেহবার ঘুম আসছে না।

হে সখাWhere stories live. Discover now