"আমি কি আপনাকে বাসায় পৌছে দেবো?"
ভারী পুরুষালি কন্ঠটা নিঝুমের ভিতরটা ভীষনভাবে নাড়িয়ে দিল। লোকটা কি তার প্রতিটি কথাই এরকম থেমে থেমে গুরুত্ব দিয়ে বলে?
কিন্তু কথা সেটা নয়, কথা হচ্ছে এই লোক ওকে বাসায় পৌঁছে দিতে চাইছে কেন?
"আ... আপনি? "নিঝুম বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলতে লাগল। মাত্র কিছুক্ষণ আগে ওনার সাথে পরিচয় হয়েছে ওর আর পরিচয় পর্বটা মোটেই সুখকর ছিল না।
"ভয় নেই। আপনাকে নিরাপত্তা দেওয়াটা এখন আমার দায়িত্বের মধ্য পড়ে। "
লোকটা নিঝুমের অস্বস্তি ধরে ফেলেছে ইতিমধ্যে।
"মানে?" নিঝুম জিজ্ঞেস না করে পারলনা, লোকটা থট রিডিং জানে নাকি? কিন্তু জানলোই বা... তাতেই বা ওকে লোকটার নিরাপত্তা দিতে হবে কেন? অবশ্য এই লোকই ওকে তুলে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। ছোটখাট একটা একসিডেন্ট হয়েছে নিঝুমের কিছুক্ষন আগে
আর সেটা ওনার গাড়ির সাথেই, ভদ্রলোক বোধহয় সেজন্যই ভদ্রতার খাতিরে ওকে পৌঁছে দিতে চাইছে।"মানে কিছু না। আপনি যেতে না চাইলে আমি আপনাকে জোর করব না। এটা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত। যদি মনে করেন যে আমাকে বিশ্বাস করা যায় তাহলে বলবেন। আমি আরো পনের মিনিট আছি এখানে, আম্মুর ডাক্তার দেখানো এখনো শেষ হয়নি।"
"ডাক্তার? "
"হ্যা আম্মুকে ডাক্তার দেখাতেই নিয়ে আসছিলাম। পথে এভাবে একসিডেন্ট না হলে হয়ত এতক্ষনে হয়েও যেত কাজটা," বলেই লোকটা রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল।
"এই যে শুনুন। আমি কি আপনার ফোনটা একটু ব্যবহার করতে পারি? আসলে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, এখন বাসায় কল না করলে দেখা যাবে আব্বু,আম্মু চিন্তায় থানা- পুলিশ করা শুরু করে দিয়েছে আর আমার ফোনটাও মিসিং... ওই হ্যান্ড ব্যাগের ভেতরেই ছিল মোবাইলটা, " নিঝুমের মনটা আবারো খারাপ হলো, ওর অনেক পছন্দের মোবাইল ছিল ওটা। একদম নিজের পয়সায় কেনা।
"আর আপনার ব্যাগটাই চুরি গেছে," লোকটা হেসে নিজের ফোনটা নিঝুমের দিকে এগিয়ে দিলো।
নিঝুমের বুকের মধ্যে কিছু একটা হলো। অদ্ভুত অনুভূতি। লোকটাকে কি ভয়নক সুন্দর লাগছে। নিঝুম তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিল। খুব খারাপ কথা.. এসব কি হচ্ছে?
কথা বলে ফোনটা দ্রুত লোকটাকে ফেরত দিয়ে দিল নিঝুম।
"আপনি আমাকে প্লিজ একটু টোকিও স্কোয়ারের সামনে নামিয়ে দিতে পারবেন?"
"নিশ্চই। কিন্তু এ অবস্থায় আপনি মার্কেটে যাবেন? " লোকটা চিন্তিত স্বরে জানতে চায়। নিঝুম সাথে সাথে মুখ নামায়। লোকটার গলার স্বরে ওর কিছু একটা হচ্ছে।
"একটু দরকার আছে ওখানে আর আমার বাবা এসে আমাকে ওখান থেকে নিয়ে যাবেন।"
"আপনি বোধহয় আমাকে এখনও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি। দাড়ান দেখাচ্ছি।"
লোকটা তার মানিব্যাগ থেকে নিজের আইডি কার্ডটা বের করে দিলো,"এখন কি একটু ভরসা করা যায়?"
নিঝুম নিঃশব্দে মাথা নাড়ল। এরপর হঠাৎ করে মুখ পিছলে বলেই ফেলল, " আমার হবু স্বামীও পুলিশ অফিসার।"
"তাই নাকি? তা ওনার নামটা কি জানতে পারি?"
লোকটা কার্ড তার মানিব্যাগে রাখতে রাখতে জানতে চাইলো।
"ওনার নাম..." নিঝুম বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ করে লোকটার মা ওনাকে ডাকলেন।
"অরন্য... বাবা চল। আর মা তুমিও আমাদের সাথেই চলো। আমরা তোমাকে একবারে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাই," বলে ভদ্রমহিলা নিঝুমের পাশে এসে দাড়ালেন।
" জি.....।" নিঝুম আস্তে আস্তে উঠে দাড়াল।
( এটি গল্পের ১ম পর্ব নয়... খন্ডাংশ। আস্তে আস্তে সুবিধামতো পুরো গল্পটা আবার দেয়া হবে। পুরো গল্পই কম বেশি সংষ্কার হবে।)
YOU ARE READING
লুকোচুরি
Romanceবাংলা রোমান্টিক থ্রিলার। ভালবাসা বলে কয়ে আসেনা তার জলজ্যান্ত প্রমান নিঝুম নামের মেয়েটি। ভার্সিটি পড়ুয়া হাসিখুশি মেয়েটা হুট করেই প্রেমে পড়ে যায় অচেনা একটি মানুষের। আর তারপরই জন্ম নেয় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের, যার ফলশ্রুতিতে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাক...