১৯

717 36 3
                                    

অরণ্যরা নদীর পাড় থেকে বাসায় ফিরে এসেই দেখে খাওয়া দাওয়ার বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। তিনটা বড়ো বড়ো ডাইনিং টেবিল পাতা হয়েছে ড্রয়ইরুমের পাশের হল ঘরটিতে।

ওদের বাসায় আরো অনেক আত্মীয় স্বজনের সমাগম ঘটেছে। অরণ্যর নানুই দাওয়াত করেছেন সবাইকে অরণ্যর হবু বউ দেখার জন্য। ঢাকায় বিয়ে হলেতো সবাই যেতে পারবেনা, তাই এই বিকল্প আয়োজন। 

নিঝুমকে শাড়ি পরতে বললেন রুমানা। গ্রামের অনেক আত্মীয় আজ আসমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে, অরণ্যর হবু বউ দেখবে বলে। আর নতুন বউকে কামিজ পরা অবস্থায় দেখতে এখনও ততটা সাচ্ছন্দ্য বোধ করে না এ দেশের মানুষ। নিঝুমও তাই মায়ের কথায় শাড়িকেই প্রাধান্য দিল আজকের রাতের অনুষ্ঠানের জন্য।

ব্যাগ থেকে জাম রঙের একটা জামদানী শাড়ি বের করলো নিঝুম, তাতে সূক্ষ্ম রুপালি সুতোর কাজ করা। নিঝুম শাড়ি পরে তৈরি হতেই আশু মুঠো ভর্তি ফুল নিয়ে এসে হাজির, " আপু জিজু এটা তোমাকে পরতে বলেছে।"

আশুর হাতে বেলি ফুলের মালাটা দেখে মনটা আনচান করে উঠল নিঝুমের। অরণ্য কি করে জানল যে ওর এই মুহূর্তে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একটা ফুলের মালা খোঁপায় পরার। চোখে আলতো করে কাজল টানার পর লিপস্টিক দেবে কি দেবে না করতে করতে শেষ পর্যন্ত হালকা গোলাপি লিপস্টিকটা একবার ঠোঁটে বুলাল নিঝুম। অরণ্য পছন্দ করে না যদিও, তবু শাড়ির সাথে একটু না দিলে কেমন যেন বেশি সাদামাটা দেখায় আর এদেশে নতুন বউ বেশি সাদামাটা হলে আত্মীয়-স্বজন আগেই মুখ ঘুরায়। এদের কাছে বউ মানেই হচ্ছে সোনার থালার মতো চকমকে। তবে অরণ্যর সতর্কবানীও এক সেকেন্ডের জন্য ভুলল না নিঝুম।

নানুর ঘরে যাওয়ার মাঝপথে হালকা আলো আধারিতে এক জোড়া হাত চেপে ধরলো নিঝুমকে। নিঝুম বাঁধা দেয়ার কোন রকম সুযোগই পেলনা তার আগেই ওর ঘাড়ে,গলায় অগনিত গরম নিঃশ্বাসের ছোঁয়া এসে হামলে পড়তে লাগল। তবে হাতের ছোঁয়াটা এখন বড্ড পরিচিত নিঝুমের...  আনমনেই এক টুকরো আলোর ফালি জেগে উঠল নিঝুমের মনের আকাশে।

নিঝুমের গায়ের মিষ্টি ঘ্রানে টালমাটাল তখন অরণ্য। আশুর হাতে পাঠিয়ে দেয়া বেলি ফুলের গন্ধ তখন অ্যালকোহলের মতোই নেশা ছড়াচ্ছে... ওর প্রতিটি রক্ত কনিকায়। কখন যে নিজের অজান্তেই মাত্রা ছাড়া হচ্ছিল অরণ্য নিজেও তা বুঝতে পারেনা।

লুকোচুরি Where stories live. Discover now