40

772 38 18
                                    

চোখ মেলতেই অনেক দিন পর বুকটা খুশিতে বাক বাকুম করে উঠল অরণ্যর। কতদিন পর ঝুমকে এরকম বুকের মধ্যে কুন্ডুলী পাকিয়ে ঘুমাতে দেখলো ও। বউটার গায়ে হাত বুলাতেই কাপড়ের নিচের সরু সরু হাড়গুলো হাতে বাজতে লাগল অরণ্যর।

মেয়েটা একদম হাড় জিরজিরে হয়ে গেছে, কিছুই বোধ হয় খায়না। অবশ্য সব দোষ ওর। বাচ্চা পেটে নিয়ে নিঝুমকে এরকম মানুষিক অত্যাচার করাটা একদম উচিত হয়নি ওর। ডাক্তার বলেছে ঝুমের ওজন আরো বাড়াতে হবে, নাহলে বাচ্চাটার বাড়তে অসুবিধা হতে পারে। আসলেই তো.. মা না খেলে বাচ্চা পুষ্টি পাবে কোথা থেকে? নিজের উপরই এখন ভারী রাগ হয় অরণ্যর, ওর এক ভুলের জন্য সমস্ত কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। না ও ঝুমকে দেখার জন্য পাগল হতো আর না অয়নের মৃত্যুটা হতো, যদিও বাবা বলে, মানুষের মৃত্যু নির্ধারিত। তবু ওর ভুলেই অয়ন দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে আর সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না অরণ্য। সবচেয়ে বড়ো কথা..  ঝুম আর বাচ্চাটার কিছু হলে নিজেকে এবার আর কোনভাবেই মাফ করতে পারবেনা অরণ্য... বেঁচে থাকাটাই তখন সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে যাবে।

"তোমার কি মন খারাপ? " ঘুম ঘুম চোখে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল নিঝুম। গায়ে হাত পড়াতে ঘুমের আবেশটা কেটে গেছে ওর, তবে চোখের পাতা এখনও পুরোপুরি মেলতে পারছেনা নিঝুম। বেশ কয়েকবার চোখ খোলা বন্ধ করার পর কিছুটা স্বাভাবিক বোধ করল ও।

"না.. বরং অনেকদিন পর আজ আমার আকাশে সূর্য উঠেছে , অন্ধকারটা কেটে গেছে," নিঝুমের কানের উপর নাকটা আলতো করে ঘষে দিল অরণ্য। আদর পেয়ে আবারো অরণ্যর বুকের গভীরে ডুবে গেল নিঝুম। ওদের চারপাশে কেমন শীতের সকালের আমেজ। ঢাকার আশেপাশে সব জেলাতেই শীতটা অনেক তাড়াতাড়ি জুড়ে বসে। আসলে বড়ো বড়ো দালান কোঠা আর যন্ত্রদানবের অত্যাচার কম তো... নিঝুমের মনে হলো এখন একটা লেপ হলে বেশ হতো। ওর আবার কম্বলের চেয়ে লেপ বেশি পছন্দ।

"ঝুম তুমি প্লিজ হরতালটা উঠিয়ে নাও না," নিঝুমের ঘন চুলের অভয়ারণ্যে নিজের ধারাল নাকটা ডুবিয়ে দিল অরণ্য। নিঝুমের থোকা থোকা  চুলের মাঝে ছাতিম ফুলের বুনো গন্ধ ভেসে আসে, বেশামাল লাগে অরণ্যর।

লুকোচুরি Where stories live. Discover now