৪৯

690 36 19
                                    


" তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো আম্মু?"

আসমা বেগম বিষন্ন চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকালেন," আয়, এখানে বোস। "

অরণ্য শ্লথ গতিতে মায়ের পাশে গিয়ে বসল।

আসমা অরণ্যর এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলোকে আঙুলের মাথা দিয়ে আঁচড়ে ঠিক করে দিলেন।

" তোর কি মনে হচ্ছে অয়নের জায়গায় তুই মরে গেলে আমি খুশি হতাম অরু ? তোরা দুজনেই আমার দুটো চোখ, তোদের দিয়েই আমি দুনিয়ার আলো দেখি। আজ একটা চোখ নেই তাই আগের চেয়ে ঝাপসা দেখি, কিন্তু দেখি। "

"আম্মু... তুমি...  "

" সশশশ...   আমার কথাটা শেষ করতে দে আগে। আমি চাই আমার নিরাপরাধ ছেলেটা তার সাথে হওয়া অবিচারের সুষ্ঠু বিচার পাক। কিন্তু সাথে এটাও চাই যে, আমার অয়ন যেন তার মায়ের কাছে অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করে না বসে যে, মামনি আমার বাবা কই? প্রতিটা জীবনে আমার ছেলেটা যেন ঘুরে ফিরে কষ্ট না পায়। তুই আমাকে কথা দে যে তুই ওদের  জন্য ফিরে আসবি, কথা দে। "

অরণ্য মায়ের হাতটা ওর শক্ত মুঠির ভিতরে চেপে ধরল। কী উত্তর দিবে ও মাকে? অয়ন! আচ্ছা বাচ্চাটা যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হয় তবে? আম্মু কি খুব বেশি কষ্ট পাবে?

কাল রাতেই ওদের কুমিল্লায় রওনা হতে হবে। এই কথা নিঝুমকে বল্লেই হয়তো কেঁদে কেটে একাকার করবে আর এখন আম্মু।  এতোদিন জানত অয়ন ব্যাংকের কাজে এখানে ওখানে যাচ্ছে, কিন্তু এখন আর কোন কিছুই লুকানো যাবে না মার কাছ থেকে , কাকে রেখে কাকে সামলাবে অরণ্য? 

.........................................…......

গত কয়েক ঘন্টায় নিঝুমের আচরনে খুব অবাক হচ্ছে অরণ্য। আর একঘন্টা পরে ওদের গাড়ি চলে আসবে। অরণ্য মনে করেছিল নিঝুম অভিমানে  ফুলে ফুলে কাঁদবে কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে আজ সারাদিন ওর সাথে ছায়ার মতো লেগে ছিল মেয়েটা। ওর ছোট ব্যাগটা প্যাকও করে দিয়েছে ঝুম  নিজেই । অরণ্য দরকারী আরও কয়েকটা টুকটাক জিনিস ভরে ব্যাগের চেইনটা লক করে দিল।

"সাতদিনের বেশি কিন্তু দেরি করবে না," আহ্লাদী ভঙ্গিতে ঠোঁট ফুলাল নিঝুম। অরণ্য নিঝুমের এই অভিনয়টুকু বুঝেও যেন বুঝলনা। থাকুক যেভাবে পারে নিজেকে শক্ত করতে... আসলে যেতে অরণ্যকে এখন হবেই।

লুকোচুরি Where stories live. Discover now