৩৮

704 39 4
                                    

"আচ্ছা ওটা না খেলে, এটা খেতে তো কোন সমস্যা নেই," অরণ্য সব্জির বাটিটা এগিয়ে দিল নিঝুমের দিকে।

কিন্তু নিঝুম অরণ্যর কোন কথারই কোন উত্তর দিচ্ছেনা। সে আগের মতোই একমনে ভাত খেয়ে যাচ্ছে চুপচাপ। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে শুধু শুধু ভাত খাওয়ার মতো কোন গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ বুঝি আর হয়না। মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মধ্যে কিছুই হয়নি... রাগ, অভিমান কিচ্ছু না। সবকিছু যেন খুব বেশি মাত্রায় ঠিকঠাক। অথচ অরণ্য জানে নীরব অভিমানে বিশ্ব চরাচর ভেসে যাচ্ছে।

সেই সকাল থেকে নিঝুমের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কৈফিয়তের পাহাড় গড়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অরণ্য। কিন্তু ফলাফল  যেই লাউ সেই কদু। নিঝুম ওর কৈফিয়ত শোনা দূরে থাক অরণ্যর দিকে ভালো করে তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত।

অরণ্য আর কী ভাবে মাফ চাইবে বুঝতে পারছেনা। এত লোক থাকতে নিঝুমের চোখেই ওই নিরবিচ্ছিন্ন ঘটনাটা পড়া লাগল? এরচেয়ে তো বাবার চোখে পড়লেও মনে হয় ওকে কম লজ্জায় পড়তে হতো... আর বোঝানোও অনেক  সহজ ছিল। কিন্তু কথায় আছে না চোরের দশদিন আর গেরস্তের একদিন। আসলে অহনাকে আস্বস্ত করতে গিয়ে একটু অতিরঞ্জিতই হয়ে গিয়েছিল অরণ্যর অভিনয়, কিন্তু অরণ্য চেয়েছিল অহনা যেন ওদের পিছুপিছু শ্রীমঙ্গল অব্দি চলে না আসে... নিঝুমের সাথে এ কটা দিন অয়ন সেজেও নিজেদের মতো কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু ও কী জানত যে ঘটনা সোজা বউয়ের চোখেই পড়বে? ধুর ধুর... জীবন একদম নরক বানিয়ে ফেলল ওর দুই মিনিটের মিথ্যে অভিনয়টা। আর এখন সেই মিথ্যে অভিনয়ের ঠিকঠাক আউটপুট দেখে বউ ওর দিকে তাকাচ্ছেও না, কথাও বলছেনা। এরচেয়ে তো মনে হয় নিঝুমের হাতে দুটো চড় খেলে কম কষ্ট হতো অরণ্যর।

"ঝুম প্লিজ আমার কথাটা শোন একটু.. "

কিন্তু নিঝুম যেন বোবা.. কথাই বলতে জানেনা।
কোনোমতে খাবার শেষ করে দোতলায় নিজের ঘরের দিকে চলল।

"ঝুম তুমি আমার কোন কথাই কেন শুনছ না?
ঝুম!"

"তুমি এত বিশ্রীভাবে চিৎকার  করছ কেন?" নিঝুম নাক টেনে টেনে উত্তর দিল। আসলে যতই উল্টো দিকে ঘুরে থাকুক না কেন নিঝুমের কন্ঠস্বরই বলে দিচ্ছে যে ও নিঃশব্দে কাঁদছে।

লুকোচুরি Where stories live. Discover now