মৃত্যু চোখ

694 32 3
                                    

এক

সকালের এই সময় টা তানজিনার কাছে আর আগের মত নেই । একটা সময় ছিল সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পরেই সে চলে যেত দক্ষিন দিকের জানলাটার কাছে । জানালার ঠিক পাশেই বড় কড়ুই গাছটা আছে । ডালপালার অনেক যার অনেকতাই চলে আছে জানলা দিয়ে ভিতরে । রীতিমত জানলা আটকাতে কষ্ট হয় ।

তানজিনার মা প্রায়ই চিৎকার করে ডালপালা গুলো কেটে পরিস্কার করার জন্য, তানজিনার জন্য পারে না । আগে মা একটু বেশি চিৎকার করতেন কিন্তু তানজিনার সাথে ঐ দূর্ঘটনা ঘটার পর থেকে খুব বেশি কথা বলেন না । মেয়ে যা বলেন তাই মেনে নেন ।

তানজির এখন সকাল সকালই ঘুম ভাঙ্গে । কিন্তু আগের মত ব্যস্ততা আর নেই । সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকা । সময় কাটানোর জন্য যে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসবে সেটারও উপায় নেই ।

ডাক্তারের পরিস্কার নিষেধ আছে, কোন ভাবেই টিভি কিংবা মনিটরের উজ্জল আলোর দিকে এক টানা বেশি সময় তাকিয়ে থাকা যাবে না । বই পড়া যাবে তবে বেশি সময় ধরে না ।

তানজিনার একা একা বেশি সময় ধরে ঘরের ভিতর বসে থাকতে ভাল লাগে না । তবুও কিছু করার নেই । বসে থাকতে হয় । বাবা মায়ের কড়া নির্দেশ । আগে সুস্থ হও তারপর যা ইচ্ছা কর ।

অপুকে একবার ফোন দিবে কি না একটু ভাবলো ।

নাহ । চিন্তাটা বাতিল করে দিল পরক্ষনেই । সবে মাত্র সকাল হয়েছে । জনাবের এতো জলদি ঘুম ভাঙ্গবে না ।

তানজিনার বিছানা থেকে উঠে জানালার দিকে একটু এগিয়ে গেল । রোদ এখনও উঠে নি । তাই বাইরের উজ্জল আলোর পরিমান একটু কম । তবে এখনই সূর্যয়ের আলো এসে হাজির হবে ।

তানজিনা জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো । ওর জানলা দিয়ে বেশ খানিকটা আকাশ দেখা যায় সাথে বাইরের রাস্তার বেশ খানিকটা স্থান দেখা যায়, আর রাস্তার পাশের ফাঁকা জায়গা টুকু । চারিপাশে উচু উচু বিল্ডিং থাকলেও কেবল ওর জানালার পাশের এই জায়গা টুকু এখনও সিমেন্টের জঙ্গলে পরিনত হয় নি । তবে কথা কানে আসছে যে দু তিন মাসের ভিতরেই নাকি এখানেও বিল্ডিং বানানোর কাজ শুরু হবে । তখন আর এই গাছটা হয়তো থাকবে না । জানালা দিয়ে তখন হয়তো আর আকাশটাও দেখা যাবে না ।

অতি-প্রাকৃত গল্পWhere stories live. Discover now