গলার হার

820 32 6
                                    

সারমিনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনদেরকে সারমিন এখনও ঠিক আপন করে নিতে পারে নি। ব্যাপারটা এমনও না যে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সারমিনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে কিংবা সারা দিন ওর উপর নানান পরিশ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেয়। বরং উল্টোটা ঘটে। শ্বশুর বাড়ির সবাই ওর সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে। বিশেষ করে ওর শ্বাশুড়ি তো ওকে নিজের মেয়ের মত আদর করে। কিন্তু সারমিনের কেন জানি একটা অস্বস্তি লেগেই থাকে। এই বাসায় আসার পর থেকেই ওর মনের শান্তি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । সারাটা সময় মনে হয় কেউ যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ও কি করছে সেটা দেখছে । এই অনুভূতিটা ওর একদম ভাল লাগে না । কিন্তু কাউকে কিছু মুখ ফুটে বলতেও পারে না ।

আবার সবাই যখন ওর এমন চমৎকার ব্যবহার করছে, সব কিছু না চাওয়ার আগেই ওর সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছে তখন ও এই পরিবারের এই সামান্য অনুভূতির জোরে কিছু বলতেও পারছে না কাউকে । কিন্তু ওর মনে বারবার একই কথা মনে হচ্ছে যে এই পারিবারে কোন না কোন সমস্যা আছে । কি সেই সমস্যা সেটা এখন হয়তো ও বুঝতে পারছে না । তবে এটা সে বুঝতে পারছে যে এই পরিবারের মানুষ জনের ব্যবহারের মধ্যে একটা মেকি ভাব আছে । ওরা তার সাথে ভাল ব্যবহার করছে ঠিকই তবে এর ভেতরে অন্য কোন কিন্তু আছে ।

বিয়ের পরেও সারমিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যেতে কেউ মানা করে নি। বরং আগের থেকে আরও নিয়মিতই যাচ্ছে সে। একা একা ঘুরাঘুরিতেও কোন বাঁধা নেই তার।

সারমিনের স্বামী আর শ্বশুর দুইজনই সারাদিন কাজে বাইরে থাকে। তাদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়। বাসায় তার এক ননদ আছে, সেও সারমিনের মতই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অন্য দিকে শ্বাশুড়ি সারা দিন রান্না বান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকে ৷ বাসায় দুজন কাজের মানুষ থাকলেও সব কাজ তিনি নিজেই করেন। এই বয়সে এসেও সারমিনের শ্বাশুড়ি সব কিছু শক্ত হাতে সামাল দেন। মাঝে মাঝে সারমিনের ভাবতেই অবাক লাগে। তার নিজের মায়ের বয়স তার শ্বাশুড়ির থেকে কমই হবে কিন্তু দুজনকে পাশাপাশি দাড় করালে সেটা কোন ভাবেই বোঝার কোন উপাই নেই। বরং মনে হবে তার নিজের মায়ের বয়সই বেশি। এতো বয়স হলেও তার শ্বাশুড়িকে মোটেই ততখানি বয়স্ক মনে হয় না । আর সারমিনের মনে হয় যেন তার শ্বাশুড়ির বয়স দিন দিন আরও করছে, বাড়ছে না ।

অতি-প্রাকৃত গল্পWhere stories live. Discover now