নরকের মেয়ে (রাফায়েল সিরিজ ০৩)

2.2K 69 15
                                    

গল্পের শুরু

সুরুজ মিয়া যখন বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয় তখন তার মাথা ঠিকমত কাজ করে না । গাড়ি চালানোর সময় বউয়ের উপর ঝাড়তে না পারা রাগটা রাস্তার উপর দিয়ে ঝেড়ে দিতে চায় । তখন তার ইচ্ছে করে সামনে যা কিছু আসুক সেটাকে পিষে ফেলে এগিয়ে যেতে ।

আজকেও সুরুজ মিয়ার মেজাজটা বেশ খারাপ । একে তো বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বউয়ের সাথে ঝগড়া করে বের হয়েছে, তার উপর বসের ঝাড়ি খেয়েছে একটু আগে । এখন তাই ঝড়ের বেগে সাপ্লাই ট্রাকটা চালাচ্ছে । সামনে যা আসবে তা পিষে ফেলতে মন চাইছে । অবশ্য এখন সেরকম সম্ভাবনা কম । বনানীর এই রাস্তাটা রাতেরবেলা একেবারে ফাঁকাই থাকে বলা যায় । আর এখন মাঝরাত । লোকজন নেই কেউ । সেটা সুরুজ মিয়াও ভাল করেই জানে । তাই তো এক্সসেলেটরে চাপ দিয়েই চলেছে । গাড়ি জোরে চালালে তার রাগ একটু কমবে !

সে যদি জানতো একটু পরে তার সাথে কি হবে তাহলে হয়তো এখনই গাড়ির গতি কমিয়ে ফেলতো । কিন্তু সুরুজ মিয়া সেটা জানে না । সাপ্লাই ট্রাকটার গতি ঝাঁঁকি দিয়ে আরেকটু যখন বেড়ে গেল তখনই সামনের চার রাস্তার মোড়টা দেখা গেল । লাল বাতি জ্বলে আছে । অবশ্য সুরুজ মিয়ার সেটা নিয়ে কোন ভাবনা নেই । এতো রাতে এখানে কোনে ট্রাফিক পুলিশ নেই, লাল বাতি দেখে থামার কোন মানে নেই । সুরুজ মিয়ার মোবাইলটা তখনই বেজে উঠলো । সামনের দিকে চোখ রেখেই সে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করলো । স্ক্রিনে নামটা দেখেই তার মন ভালো হয়ে গেল ।

তার স্ত্রী ফোন করেছে । এখন ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করবে মেয়েটা । প্রত্যেকবারই এমন হয় । বের হওয়ার সময় ঝগড়া, তারপর রাস্তায় ফোন দিয়ে কান্নাকাটি । সুরুজ মিয়ার চোখ তখন সম্পূর্ণভাবে মোবাইল স্ক্রিনে নিবদ্ধ । তাই সে লক্ষ্যও করলো না যে চৌরাস্তার বামদিক থেকে একটা ভ্যান আপনমনে ছুটে আসছে । তার সিগনাল গ্রিন তাই সে খুব একটা চিন্তিতও হচ্ছে না ।

সুরুজ মিয়া যখন আবার চোখ তুলে সামনের রাস্তার দিকে তাকালো তখনই ভ্যানটাকে দেখতে পেল । মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেল আপনাআপনি । দুই হাত দিয়ে স্টিয়ারিং ধরে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ব্রেকে চাপ দিল সে । কিন্তু সুরুজ মিয়া খুব ভাল করেই জানে এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব না । একে তো তার ট্রাকভর্তি মালপত্র, তার উপর ব্রেকটাও অতো ভাল করে কাজ করে না যে চাপার সাথে সাথেই থেমে যাবে । যত সময়ে থামবে তত সময়ে ভ্যান চালক আর ভ্যান মাটির সাথে মিশে যাবে । সুরুজ মিয়া আর দেখতে চাইলো না । চোখ বন্ধ করার আগে হেড লাইটের আলোতে ভ্যান চালকের অবাক হওয়া চোখটা দেখতে পেল শুধু ।

অতি-প্রাকৃত গল্পWhere stories live. Discover now