পাখিওয়ালা

816 25 0
                                    

কাঠের বারান্দাটাতে হাটাহাটি করলেই আওয়াজ হতে থাকে । এই নিশ্চুপ রাতে সেই আওয়াজটা কানে বড় বেশি আওয়াজ তুলে চলেছে । শেষে হাটাহাটি বাদ দিয়ে অবনী বারান্দাতে রাখা একটা সোফাতে বসে পড়লো । শূন্য চোখে তাকিয়ে রইলো সামনের দিকে । সামনের কোন কিছুই সে দেখছে না ।

আজকে আকাশে চাঁদ না থাকলেও চারিপাশটা বেশ ভাল করেই দেখা যাচ্ছে । হয়তো রিসোর্টের চারিদিকে আলো জ্বালানো রয়েছে বলেই এমনটা মনে হচ্ছে । অবনী এক ভাবে অন্ধকারের দিকে তাকিয়েই রইলো । মাথাটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । কিছুই ভাবতে পারছে না পরিস্কারভাবে । বারবার কেবল সাব্বিরের চেহারাটা মনে পড়ছে । ওর ভীত চোখটা সে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছে না । বারবার নিজের কাছেই প্রশ্ন করছে, কাকে কিংবা কি দেখে ও এতো ভয় পাচ্ছে ? এতো তীব্র ভাবে ভয় পেতে ও আর কাউকে দেখে নি ।

-আফা মনি !

অবনী তাকিয়ে দেখে বারান্দার নিচে কেয়ারটেকার গনি মিয়া দাঁঁড়িয়ে আছে । এতো রাতে গনি মিয়াকে জেগে থাকতে দেখে অবনী একটু অবাক হল । তাকিয়ে বলল,

-কি ব্যাপার চাচা এখনও ঘুমান নি ?

-আপনেও তো ঘুমান নাই !

-আমার ঘুম আসছে না ।

-ছোট সাহেবের কথা চিন্তা করতেছেন ?

অবনী কোন কথা বলল না । আবারও শূন্য অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । গনি মিয়া বলল,

-অনেক রাইত হইছে । আপনে এইবার ঘুমাইতে যান । এতো রাইত কইরা যাইগা থাইকেন না ।

অবনী জানে ঘুমাতে গেলেও ওর ঘুম ঠিক মত আসবে না । সাব্বিরের সাথে ঐ ঘটনা ঘটার পর থেকে ওর একটা রাতও ঘুম আসেনি শান্তিমত । বারবার কেবল সাব্বিরের সেই ভয়ে ভয়ে চিৎকার করে ওঠার আওয়াজটা ওর কানে ভাসতে থাকে । এমন কেন হচ্ছে ওর সাথে? কেন ও এতো ভয় পাচ্ছে? এতো ভয় পাওয়ার কি আছে ?

কত ডাক্তারের কাছে গিয়েছে ওকে । মনোরোগ ডাক্তারের কাছ থেকে মস্তিস্কের ডাক্তার পর্যন্ত সবার কাছেই সাব্বিরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয় নি । ডাক্তারি চিকিৎসার পরে এবার হাজির হল অন্য চিকিৎসা । পীর ফকির থেকে শুরু করে যেখানে যে কবিরাজের কথা শোনা গেছে সাব্বিরের বাবা তাকেই এনে হাজির করেছে সাব্বিরের চিকিৎসার জন্য । কিন্তু কোন লাভ হয় নি । বরং দিন দিন সাব্বিরের অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে ।

অতি-প্রাকৃত গল্পWhere stories live. Discover now