অনুগল্পঃ বিদায়
লুবনার ঘুম বেশ পাতলা। একটু শব্দতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে কতবার যে ওর ঘুম ভাঙ্গে সেটার কোন ঠিক নেই। তবে ঘুম ভাঙ্গলেও সেটা আবার তাড়াতাড়িই চলে আসে। তাই খুব একটা সমস্যা হয় না।
আজকেও রাতের বেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে কিছু সময়ে ঠিক বুঝতে পারলো না কিসের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো না। তারপর লক্ষ্য করলো ওর ঘরের দরজাটা খুলে যাচ্ছে। তারপর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ঘরের ভেতরে একটা অয়বয় প্রবেশ করছে। যখন অয়বয়টাকে চিনতে পারলো তখন ওর বিস্ময়ের সীমা রইলো না। কারন মানুষটা ওর দাদী। দাদী বহুদিন ধরে অসুস্থ। নিজের বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। আজকে নিজের ঘর ছেড়ে লুবনার ঘরে এসে হাজির।
লুবনা বলে উঠলো, দিদা তুমি হাটছো?
দাদী হাসলো একটু। তারপর বলল, তুই খুব ভাল রে দিদি ভাই। ভাল থাকিস।
লুবনা বলল, কি বলছো দিদা?
দিদা বলল, আচ্ছা তুই ঘুমা। আমি যাই।
লুবনা কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। দেখলো আবারও আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। লুবনার মনটার সত্যিই ভাল হয়ে গেল। লুবনার দাদী আগে এমন রাতের বেলা পুরো বাড়িময় হেটে বেড়াতো। অনেকদিন পরে আবার দাদী সুস্থ হয়ে উঠছো। আবার শুয়ে পড়লো। ঘুম চলে এল একটু পরেই।
লুবনার ঘুম ভাঙ্গলো একেবারে সকালে। কান্নার আওয়াজ শুনে। ঘুম ভেঙ্গে কিছু সময় বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে। তারপর বুঝতে পারলো ওর ছোট ফুফি কাঁদছে। দৌড়ে গিয়ে দেখলো ওর দাদীর ঘরে বেশ কিছু মানুষ৷ ওর দাদী মারা গেছে৷
কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। রাতে কি চমৎকার ওর দাদী ওর কাছে এসে কথা বলল! আর এখন কি না শুনছে মারা গেছে ! কিন্তু যখন ওর ডাক্তার চাচার কথা শুনলো তখন যেন আকাশ থেকে পড়লো। ওর চাচা বক্তব্য মতে দাদী মারা গেছে অন্তত আট ঘন্টা আগে। কিন্তু রাতে যখন ওর কাছে এসেছিল তখন ভোরের আযানের একটু আগে।
তাহলে?
তাহলে কি ওর দাদী ওর কাছ থেকে বিদায় নিতে এসেছিল?
অনু গল্পঃ নিমুর কান্না
নিমু চিৎকার করে কাঁদছে। কান্নার আওয়াজটা আমি পরিস্কার শুনতে পেলাম। রাতের বেলা এই আওয়াজ শুনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছুটা সময় চুপ করে শুয়েই রইলাম৷
আমার মেয়েটা তখনও কান্না করেই চলেছে৷ আমাকে ডাকছে যেন। এমন অবস্থায় নিজেকে ধরে রাখা মুস্কিল।
আমি পাশ ফিরে অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম। বাইরের চাঁদের আলোতে অপুর ঘুমন্ত মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ গাঢ় নিঃশ্বাস পড়ছে৷ রাতের বেলার অপুর ঘুম বেশ গাঢ় হয়। সহজে ভাঙ্গে না৷ আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। আরেকবার তাকিয়ে দেখলাম। একটু যেন নড়ে উঠলো তবে ওর ঘুম ভাঙ্গলো না। আমি উঠে দাড়ালাম।
পাশের ঘরে নিমুর দোলনার কাছে যেতেই বড় ধাক্কাটা খেলাম। আমার মেয়েটা এখানে নেই৷ অথচ ওর কান্নার আওয়াজ আমি পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি। এখনও চিৎকার করে কান্না করেই চলেছে।
আমি আওয়াজ লক্ষ্য করে হাটতে লাগলাম। আমার বুকের ভেতরে তখন কেবল নিমুর চিন্তা। নিমু কেন কাঁদছে? আমি ওকে একা রেখে ঘুমিয়েছি এই জন্য কাঁদছে ও?
ভয় পেয়েছে ও?
কোন ভয় নেই। আম্মু এখনই চলে আসবে। আমি দ্রুত পা বাড়ালাম।
বাড়ির পেছনের দরজা খুলে ফেলতেই আওয়াজটা আরও একটু বেড়ে গেল। ঐতো বড় আম গাছটার কাছ থেকে আসছে আওয়াজটা৷ আমার নিমু ওখানেই আছে৷
আমি দরজা দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবো এমন সময় পেছন থেকে অপুর আওয়াজ শুনতে পেলাম।
-লুবনা! লুবনা!
আমি অপুর দিকে না তাকিয়েই বললাম
-অপু আমার নিমু কাঁদছে। তুমি শুনতে পাচ্ছো না?
অপু দ্রুত আমার কাছে এগিয়ে এল। আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে রাখলো কিছুটা সময়। একটা সময় আমি লক্ষ্য করলাম আর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না আমি। অপু কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
-আমার মেয়ে আর বেঁচে নেই। এই কথাটা তোমাকে মেনে নিতে হবে। বুঝতে পেরেছো তুমি!
আমি কিছুটা সময় চুপ করে থাকি। কোন কথা বলতে পারি না। ঐ আম গাছটার নিচে নিমুকে কবর দেওয়া হয়েছে। আমি জানি ও মারা গেছে, তবুও এটা মানতে আমার কষ্ট হয়। আমি প্রতিদিন ওর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। ওকে ছেড়ে থাকতে যেমন আমার কষ্ট হয়, ওরতো আমাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়!
YOU ARE READING
অতি-প্রাকৃত গল্প
Horrorমাঝে মাঝেই ভুতের গল্প লিখি । এখানেই তেমনি কিছু গল্প যুক্ত হবে । কিছু পুরাতন গল্পও এড হবে যেগুলো আগে লিখেছি । গল্প বেশি বড় হয়ে গেলে দুই পর্বে নয়তো এক পর্বেই শেষ হবে প্রতিটি গল্প । রাফায়েল সিরিজের সমস্ত গল্প এখানে পাওয়া যাবে ।