জীবনের রঙ

686 31 3
                                    

ক্লাসের ঘন্টা বাজার ঠিক দুই মিনিট আগে আমি নিশিকে দেখতে পেলাম । দরজায় এসে দাড়িয়েছে । ওর চেহারা দেখেই আমার মনে হল যে ও এতোটা পথ দৌড়ে এসেছে । আমার সাথেই যে দেখা করতে এসেছে, সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না । ওর মুখের ভাবটা দেখে আমার আবারও মনে হল যে গত দিন ওকে কথা গুলো বলা আমার একদম ঠিক হয় নি । ওর কাছ থেকেও আমার ব্যাপারটা লুকানোর দরকার ছিল । যেমনটা আমি সারাটা জীবন লুকিয়ে এসেছি আর সবার কাছ থেকে । এটা অনেক জানানো আমার একদম উচিৎ হয় নি । যদি ওকে না জানাতাম তাহলে ঝামেলাটা সৃষ্টি হত না ।

এখন আমি কি করবো ?

নিশি দরজার কাছে দাড়িয়েই কিছুটা সময় এদিক ওদিক তাকালো । আমি জানি ওর চোখ আমাকেই খুজে বেড়াচ্ছে । আমাকে খুজে পেতে ওর খুব একটা দেরী হল না । আমাকে দেখার সাথে সাথেই আমার দিকে হাটা দিল ।

মাঝের দিকে একটা বেঞ্চে বসে ছিলাম । আমার হাত ধরে একেবারে শেষের দিকে নিয়ে বসালো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তুমি ফোনে কি বললে ?

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । নিশি আবার তীব্র কন্ঠে বলল

-বল কি বললে ? আমার কাছে কি লুকাচ্ছো ? সত্যি করে বল । আমি কি মারা যাচ্ছি ? যাবো ?

আমি মাথা নাড়ালাম । নিশি আবার বলল

-তাহলে ? কে মারা যাবে ? আমার বাবা নাকি মা ?

আমি চুপ করে রইলাম । ব্যাপার নিশিকে আমি কিভাবে বলবো বুঝতে পারলাম না । আমি এখন যাই বলি না কেন তার ফল মোটেই ভাল হবে না । আমি নিশিকে বললাম

-দেখ, এটা নির্ধারিত । আমরা এটাকে বদলাতে পারি না । এমন কি আগে থেকে এটা জানাও ঠিক না ।

নিশি এক প্রকার চিৎকার করেই বলল

-আমি কিছু জানতে চাই না । আমি কেবল সত্যটা জানতে চাই !

নিশি এতোই জোরে চিৎকার করে কথাটা বলল যে সামনে থেকে অনেকে আমাদের দিকে ফিরে তাকালো । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলল

-শান্ত হও দয়া করে । সময় আছে । এখনও অনেকটা সময় আছে ।

এই কথাতে নিশি খানিকটা শান্ত হল । আমি আরও কিছু বলতে যাবো তার আগেই ক্লাসে স্যারে ঢুকে পড়লো । আর কিছু বলা হল না । তবে মনের মধ্যে সেই খুঁতখুতানিটা রয়েই গেল । আমার তখন আরেকবার মনে হল যে নিশির কাছে আমার এই গোপন কথাটা বলা মোটেই উচিৎ হয় নি । একদমই না । এটা সারা জীবন আমার ভেতরে লুকিয়ে রাখাই উচিৎ ছিল ।

অতি-প্রাকৃত গল্পWhere stories live. Discover now