অর্টিরাস

417 23 4
                                    

ইরার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে রেহান ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে । পুরো অফিসের সামনে ছেলেটা ওকে প্রোপোজ করছে ! চোখ বড় বড় করে কেবল তাকিয়ে রয়েছে সামনের দিকে । রেহানের চোখের দিকে । ইরার মনে হল যে আশে পাশে আর কেউ নেই । কেবল ওরা দুজন রয়েছে । আর কেউ নেই ।

রেহান আবারও বলল, আই এম নট গুড এট টকিং । ইউ নো দ্যাট ! কি কি বলতে হয় কিভাবে বলতে হয় জানি না । সরাসরি কথা বলতে ভালোবাসি আমি । ইরা হাসান, উইল ইউ ম্যারি মি !

ইরার এখন কি বলা উচিৎ ?

হ্যা বলবে?

অবশ্যই হ্যা বলা উচিৎ । এমন একটা মানুষ সে আর কোন দিন খুজে পাবে? পাওয়া কি সম্ভব? না কোন দিন সম্ভব না । কিন্তু মানুষটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো । এটা অফিসের সবাই জানে । সেই মেয়েটা মারা গিয়েছিলো । কত মানুষেরই তো বউ মারা যায়. জন্ম মৃত্যুর উপর কি মানুষের কোন হাত আছে?

ইরা বলল, ইয়েস !

ইয়েস শব্দটা কিভাবে বলল সেটা ও নিজেও জানে না । কেবল মনে হল যে কেউ যেন ওকে দিয়ে ইয়েস বলিয়ে নিল । নিজের কাছেই অবাক হয়ে গেল । ইরা দেখলো রেহান এগিয়ে আসছে । ওর হাত ধরে হাতে আংটিটা পরিয়ে দিল । সাথে সাথেই হাত তালির আওয়াজ শুনতে পেল ও । তখনই মনে হল ও অফিসেই দাড়িয়ে রয়েছে । সবাই দেখছে ওকে । হাতের ভেতরে আংটিটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় ধরে । কেমন একটা অদ্ভুত আকর্ষন সৃষ্টি হল ওর নিজের ভেতরেই ।

রেহানকে ও চেনে যেদিন অফিসে জয়েন করেছে সেদিনই । অফিসের সব থেকে জনপ্রিয় এপ্লোয়ী সে । তবে ও যেদিন অফিসে জয়েন করে ঠিক তার পরের দিনই রেহানের স্ত্রী মারা যায় । আত্মহত্যা করেছিলো সে । রেহান অফিসেই ছিল যখন খবরটা আসে । তারপর ধীরে মানুষটাকে সে দেখেছে একেবারে চুপসে যেতে । সবার কাছে শুনেছে যে রেহান নাকি খুব হাসিখুশি মানুষ ছিল । সবার সাথে খুব মিশুক ছিল । বিশেষ করে মেয়েদের কাছে সে ছিল খুব বেশি জনপ্রিয় । সেই মানুষটা একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো বেশ কিছুদিন ।

আরেকটা ব্যাপার ইরা খেয়াল করেছিলো ওর স্ত্রী মারা যাওয়াতে অফিসের কয়েকজন যেন একটু খুশিই হয়েছিলো । এবং তারা রেহানের পেছনে লেগেছিলো তারপর থেকেই যাতে রেহান ওদের দিকে ঝুকে পড়ে । কিন্তু এই ছেলেটা যেন নিজের মৃত স্ত্রীকে ফেলে অন্য কাউকে নতুন করে নিজের জীবনের সাথে যুক্ত করতে চাইছিলো না । একটা বছর এভাবেই কেটে গেল । তারপর থেকেই ইরা লক্ষ্য করতে শুরু করলো যে রেহান আবার সবার সাথে মিশতে শুরু করেছে এবং সেই মেলামেশার ভেতরে ইরার দিকে যেন একটু আলাদা লক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছে । ব্যাপারটা একই সাথে ইরাকে খানিকটা অস্বস্তিতে এবং খানিকটা আনন্দিত করে তুলছিলো । তারপর একটা সময়ে ইরা বুঝতে পারলো যে রেহান ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছে । এবং আজকে ওকে প্রোপোজ করে ফেলল । ইরা তাতে রাজিও হয়ে গেল ।

অতি-প্রাকৃত গল্পWhere stories live. Discover now