তৃষার বুকটা ধুপধুপ করছে। কোন দিন এমন পরিস্থিতিতে সে পরবে সে ভাবতেই পারে নি। তীব্র একটা ভয় কাজ করছে। মনে হচ্ছে হয়তো ও এখনই মারা পরবে।
আবার চারিপাশে আওয়াজ শোনা গেল। মারামারি আর হুড়োহুড়ি চলছে আর তখনই ছেলেটা আরেকটু ওর শরীরের দিকে চেপে এল।ছেলেটার চোখের তাকালো। তখনই তৃষার মনে হল ছেলেটা ওকে সাহায্য করতে চাচ্ছে। এই ভয়ের পরিস্থিতির ভেতরেও তৃষার কেমন রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগলো। আর কেউ হতে পারতো! এই ছেলেটাই কেন? এরই নামই ভাগ্য!
সকাল বেলা থেকে ক্যাম্পাসে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। সরকারি দলের দুই গ্রুপের ভেতরে ক্যাম্পাসে কর্তৃত্ব প্রদর্শনের জন্য কদিন থেকেই কিছু হবে হবে করছিল। তৃষা হয়তো ক্যাম্পাসে আসতোও না কিন্তু আজকে সেমিস্টার ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। তাই ওকে আসতেই হয়েছিল। ব্যাংকে জমা দেওয়ার সময়ই ঝামেলা বেঁধেই গেল। দুই গ্রুপের ভেতরে মারামারি বেঁধে গেল। আর তৃষা একেবারে মাঝখানে পড়ে গেল। এতো হুড়োহুড়ি মাঝে কেউ তৃষার দিকে লক্ষ্যই করতেছিলো না। তখনই একজন যেন ওকে টান দিয়ে দেওয়ালের দিকে নিয়ে গেল। তারপর নিজের শরীর দিয়ে আলাদা করে ফেললো। প্রথমে তৃষা একটু যেন ভয় পেয়ে গেছিলো। কিন্তু তখনই বুঝতে পারলো যে ছেলেটা আসলে ওকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
আরেকটু ভাল করে তাকাতেই ছেলেটাকে চিনতে পারলো ও। ছেলেটা ওদের ক্লাসেই পড়ে। অপু নাম ছেলেটার। কোন দিন কথা হয় নি যদিও তবে ছেলেটার সাথে দেখা হয় প্রায় প্রতিদিনই। যদিও অপুর সাথে কোন দিন কথা হয় নি তবে তৃষা অপুকে প্রতিদিনই ভাল করে লক্ষ্য করে।
তৃষা কেবল দেখলো মাঝে মাঝে কেবল অপু ওর দিকে ঝুকে আসছে। সেটা পেছন থেকে ধাক্কা আসছে। সেটা নিজ থেকেই আটকানোর চেষ্টা করছে যাতে তৃষার গায়ে আঘাত না লাগে।
আর মিনিট সাতেক লেগেই গেল তৃষা আর অপুর বের হতে। যখন নিরাপদ দূরত্বে চলে গেল তখন তৃষা লক্ষ্য করে দেখলো যে অপু ওর হাত ধরে আছে। ও সেদিকে তাকাতেই অপু সেই হাত ছেড়ে দিল। তৃষা ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-থ্যাংকস। যা ভয় পেয়েছিলাম। তুমি না থাকলে যে কি হত! থ্যাংকিউ অপু।অপু খানিকটা অবাক হয়ে তৃষার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি আমার নাম জানো?
-কেন জানবো না?
-না মানে আমাদের তো কোন দিন কথা হয় নি।
-বাহ! কথা না হলেই কি নাম জানবো না। আমি তোমার নাম ছাড়া অবশ্য আরও অনেক কিছুই জানি।অপু এবার তৃষার দিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে বলল
-তাই নাকি? কি জানো?
-বলব কেন? আমি যেমন নিজ থেকে খোজ নিয়েছি তুমিও খুজে নেও আমি কি জেনেছি।এবার অপুকে বিভ্রান্ত মনে হল। সে যেন কিছুই বুঝতেই পারছে না। মেয়েটা একটু আগেও ভয় পেয়ে ছিল কিন্তু এখন সেই ভয়ের চিহ্ন নেই চেহারায় বরং সেখানে একটা দুষ্টুমির ছাপ রয়েছে। বড় অদ্ভুস।
তৃষা ওর ক্লাসেই পড়ে। দূর থেকে প্রতিদিনই দেখে ও মেয়েটাকে। প্রতিদিন কালো রংয়ের একটা বেঞ্জে চড়ে আসে ক্লাস করতে। সব থেকে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটা গাড়ি নিজেই চালায়। প্রথম যেদিন দেখেছিল খুব অবাক হয়েছিল। এই দেশে যে কোন মেয়েকে গাড়ি চালাতে দেখলে মানুষ এমনিতেই হা করে তাকিয়ে থাকে। সেখানে তৃষা তো দেখতে একেবারে পিচ্চি। অবশ্য অপু শুনেছে তৃষা আগে আমেরিকা ছিল। সেখানকার কালচার এদেশ অনেক আলাদা হওয়ারই কথা।
তৃষাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। গাড়ি ছাড়ার আগে তৃষা আরেকবার অপুর চোখের দিকে তাকালো। সেই অন্য কিছু ছিল যা অপুকে আরো একটু বেশি বিশ্মিত করে তুলল। মনে হল মেয়েটাকে সে এতোদিন যা ভেবে এসেছিল সেটা সে কোন ভাবেই নয়। এর ভেতরে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে। মনের ভেতরেই সেই বিশ্ময় ভাবটা রয়েই গেল। অপুর ধারনাই ছিল না যে তৃষা ওকে চিনে কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে কেবল চিনেই না, আরো অনেক কিছুই জানে সে। কিন্তু কি জানে?
এই ব্যাপারটা ওকে ভাবালো অনেক। কিন্তু কিছুই বের করতে পারলো না। যদি তৃষা নিজ থেকে না বলে তাহলে কি সে কোন জানতে পারবে!!
এদিকে গাড়ি চালাতে চালাতে তৃষা কেবল ঐ সময়টার কথাই ভাবছিল। মারামারির সময় অপু একদম ওর কাছে চলে এসেছিল। এতোই কাছে যে অপুর নিঃশ্বাসের আওয়াজ পর্যন্ত সে শুনতে পাচ্ছিলো যেন। সেদিনের ভাললাগার মানুষটাকে এভাবে এতো কাছে পাবে তৃষা কোন দিন ভাবতেও পারে নি। আর অপুর মধ্যেও একটা আলাদা আগ্রহ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃষার খুব মজা লাগলো। তৃষা খুব ভাল করেই জানে অপু কেবল এখন থেকে ওর কথাই ভাবতে থাকবে। খুব ভাল হবে। এতো দিন কেবল তৃষা একা একা ভেবেছে এখন ওপাশ থেকেও ঠিক একই ভাবে ভাবণা চলবে।
তৃষা ঠিক করে রেখেছে অপুকে সে খুব জ্বালাবে। খুব বেশি। আসন্ন দিন গুলোর কথা ভাবতেই ওর মনে আলাদা একটা আনন্দের আভা দেখা দিল। একা একাই হেসে উঠলো ও।সামনের দিন গুলো অন্য রকম হতে চলেছে।
YOU ARE READING
তৃষার গল্প - সিজন টু
Short Storyতৃষার গল্পের প্রথম সিজনের প্রতিটি গল্পই সবার পড়া । তবে সেই গল্প গুলো এখন ড্রাফটে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে কোন দিন আবার পড়ার সুযোগ পাবেন কেউ । আপাতত তৃষার গল্পের দ্বিতীয় সিজন শুরু হচ্ছে । গল্প গুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে ফেলুন । হয়...