বাউলার দীঘি

969 33 9
                                    

সকাল থেকে আকাশে মেঘ করে আছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। একটু আগে ঠান্ডা বাতাস ছেড়েছে। নিশ্চয় আসে পাশে কোথাও বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

বৃষ্টির আগের এই সময়টা তৃষার খুব পছন্দের ছিল। এই সময়টা বাসায় থাকলেই দৌড়ে ছাদে চলে যেত। তারপর মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিত। তারপর বৃষ্টির পুরোটা সময় দৌড়াদৌড়ি করতো। কিন্তু এখন আর সেসব ভাল লাগে না। এখন আর বাইরে যাওয়া হয় না।

আজকে তৃষার মনটা আরও বেশি খারাপ। গতকাল রাতে আরিয়ানদের বাসা থেকে জানানো হয়েছে যে আরিয়ান কদিনের জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছে। ওর পক্ষে এখন বিয়ে করা সম্ভব হবে না।

তৃষা জানে যে সরাসরি না বলে আরিয়ান এবং তার পরিবার বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে। প্রথম যখন ওর রোগটা ধরা পড়লো, আস্তে আস্তে ওর কাছের মানুষ গুলো দূরে চলে যেতে শুরু করলো। ওর এতো দিনের বন্ধুত্ব রিদির সাথে, সেই রিদিও ওর থেকে দূরে থাকতে শুরু করলো। কাছে তো আসতোই না, ফোন করলেও কথা বলতে আগ্রহ দেখাতো না। এমন একটা ভাব দেখাতো যে কথা বললেই যেন রোগটা ওদের হয়ে যাবে।

প্রথম প্রথম তৃষার খুব খারাপ লাগতো। তবে ওর একটা বিশ্বাস ছিল যে আরিয়ান ওকে ছেড়ে যাবে না। দিন দিন ওর অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলো যে ওর দিন ঘনিয়ে আসছে। তবুও আশা ছিল যে আরিয়ান ওকে ছেড়ে যাবে না।

কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই ই ওকে ছেড়ে গিয়েছে । বাড়ির কাজের মানুষ গুলোও ওর কাছে আসতে ভয় পায় । কেবল মাত্র বাবা আর মা ছাড়া আর কাউকে ওর এখন ভাল লাগে না ।

আরেকজন মানুষ অবশ্য আছে । তবে তাকে ও সরাসরি কোন দিন দেখেনি । অনলাইনে পরিচয় । ছেলেটা কোথা থেকে যেন ওর নাম্বার সংগ্রহ করেছে । যখন ওর কাছ থেকে সবাই দুরে চলে গিয়েছে তখন ছেলেটার সাথে কথা বলতো ও । কত রকমের কথা যে ও বলতো ছেলেটার সাথে । ছেলেটাও যেন সব আগ্রহ নিয়ে কথা শুনো শুনতো । নক দিলেই উত্তর আসতো সাথে সাথেই । মন খারাপ থাকলে এখন ছেলেটার সাথেই তৃষার কথা হয় ।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ছেলেটার ব্যাপারে কিছুই জানে না সে । এমন কি ছেলেটার নাম পর্যন্ত না । প্রথম প্রথম একটু চেষ্টা করতো তবে পরে আর চেষ্টা করে নি । কি হবে এতো চিন পরিচয় দিয়ে । ওর চেনা পরিচিত মানুষ গুলোকে তো ও দেখছেই এখন । কত সহজেই না চিরো চেনা এই মানুষ গুলো ওকে ছেড়ে চলে গেল ।

তৃষার গল্প - সিজন টুWhere stories live. Discover now