তৃষা বিরক্তি নিয়ে তাকালো অপুর দিকে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা কাচুমাচু ভাব। তৃষা খানিকটা কঠিন কন্ঠে বলল, তোমাকে কি বললাম আমি?
অপু খানিকটা আমতাআমতা করে বলল, না মানে?
-অপু তোমাকে ঘুমাতে বলেছি!
অপু প্রসঙ্গ একটু বদলে বলল, ব্যাথাটা কি একটু কম?
-না। তুমি জানো ব্যাথা কমবে না এতো জলদি।
-আমি একটু বসি!
-অপু, তুমি এখানে বসে কিছু করতে পারবে? আমি নিজে যেখানে ডাক্তার, আরও বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছি তারা যখন কিছু করতে পারছে না, তোমার এখানে বসলে ব্যাথা কমে যাবে?তৃষা দেখলো অপু কিছুটা সময় মুখ অন্ধকার করে তাকিয়ে রইলো তৃষার দিকে। তারপর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। তৃষার তখনই মনে হল এতো কঠিন কন্ঠ নিয়ে কথা না বললেও হত! বেচারা তো খারাপ কিছু বলে নি। অপুর যদি শরীর খারাপ হয় তৃষা নিজে সব টা সময় অপুর সামনে থাকে। ওর মনে হয় অন্য কেউ এই কাজ গুলো ঠিক মত করতে পারবে না। তৃষার রাগ করা উচিৎ হয় নি। কিন্তু এই ব্যাথাটা যখন ওঠে তখন ওর মাথা গরম হয়ে যায়। কিছুই সহ্য হয় না। সব কিছুর উপর বিরক্ত লাগে। তখন ইচ্ছে হয় সব কিছুতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এই ব্যকপেইন ওকে অনেক কিছুর কথা মনে করিয়ে দেয়। টিনএজ বয়সের একটা দুর্ঘটনা থেকেই এই ব্যাথাটা শুরু হয়েছিল। অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয় নি। যতদিন সে বেঁচে থাকবে ততদিন এই ব্যাথা থাকবে।
তৃষা অফিসের ফাইল নিয়ে বসলো। এখন যত পারা যায় কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকতে হবে। কাজে ডুবে থাকলে এই ব্যাথা ভুলে থাকা যাবে।
আগে যখন এই ব্যাথা উঠতো ড্রিংক করা শুরু করতো। কয়েক পেগ শরীরে ঢুকলেই আর কিছু মনে থাকতো না। কিন্তু বিয়ের পরে এসব অপু একদমই করতে দেয় না। পুরো বাসায় কিছুই রাখতে দেয় না। এমনিতে বাসায় তৃষায় ইচ্ছেতেই সব কিছু হয় তবে কিছু ব্যাপারে অপুর কথা ওর শুনতেই হয়। মানা করা যায় না।ফাইলগুলো যখন দেখে শেষ করলো তখন অনুভব করলো ওর ব্যাথাটা অনেকটাই কমে গেছে। মাথাটা এখন একটু ঝরঝরে লাগছে। মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়ে আসলো। তখন মনে হল অপুর সাথে একটু কথা বলা দরকার।
অপুর সাথে একটু মিষ্টি স্বরে কথা বললেই অপু সব কিছু ভুলে যায়। আগে কি কারণে সে কষ্ট পেয়েছিল সেটা তখন আর মনে থাকে না।দরজা খুলে বের হয়ে এল। স্টাডি রুমে গিয়ে অপুকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেল। খানিকটা চমকে গেল। অপুর দিকে তাকিয়ে রইলো। মন সিক্ত হয়ে উঠলো।
এই পাগল ছেলে!অপু জায়নামাজে বসে নামাজ পড়ছে। তৃষা খুব ভাল করে জানে উপরওয়ালার কাছে ও কি দোয়া করছে।
ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। অপু নামাজ শেষ করে সালাম ফেরাতেই তৃষাকে দেখতে পেল।
তৃষা বলল, কতক্ষণ ধরে এখানে?
অপু বলল, এইতো!
-আচ্ছ তোমার রাগ হয় না আমার উপর?
-রাগ কেন হবে?তৃষা সামনে এগিয়ে এল। তারপর পেছন অপুকে জড়িয়ে ধরে বলল, এখন ভাল লাগছে। চল ঘুমানো যাক।
-তুমি যাও আমি আসছি।
-উহু। তুমি নিয়ে যাও দেখি।
-কিভাবে? কোলে করে?
-হুম।
-তোমার ওজন কত জানো?
-এই খবরদার বলছি! ভাল হবে না।....
YOU ARE READING
তৃষার গল্প - সিজন টু
Short Storyতৃষার গল্পের প্রথম সিজনের প্রতিটি গল্পই সবার পড়া । তবে সেই গল্প গুলো এখন ড্রাফটে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে কোন দিন আবার পড়ার সুযোগ পাবেন কেউ । আপাতত তৃষার গল্পের দ্বিতীয় সিজন শুরু হচ্ছে । গল্প গুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে ফেলুন । হয়...