তৃষার ঘুম সব সময়ই পাতলা। আর এমনিতেও ঘুম ওর বেশ কম হয়। অপু মাঝে মাঝে চোখ কপালে তুলে বলে মানুষ জীবনে এতো কম ঘুমিয়ে থাকে কিভাবে!
তবে ওর ভেতরে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হওয়ার পরপরই অপু আরও বেশি প্রটেক্টিভ হয়ে উঠেছে। নিয়মিত খাওয়া আর ঘুম যাতে হয় সেদিকে ওর কড়া নজর। তৃষা মানতে চায় নি তবুও তাকে মানতে হয়। অপু পরিস্কার বলে দিয়েছে সব কিছু সব সময় তোমার কথা মতই চলবে তবে এই সময়টা তাকে ঠিক মত চলতেই হবে। কোন অনিয়ম করা চলবে না। কয়েকবার চেষ্টা করেও তৃষা ঠিক পার পায় নি। শেষে বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। নিয়ম করে খাওয়া নিয়ম করে ঘুম। ঘুম না আসলেও শুয়ে থেকে বিশ্রাম নেওয়া।
আজকেও সময় মতই ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু কিছু সময় পরেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। অভ্যাস মতই বিছানার পাশে হাত চলে গেল।
বিছানা খালি!
অপু পাশে নেই!এমনটা স্বাধারনত হয় না। অপুর এক ঘুমেই রাত পার হয়ে যায়। ওয়াশরুমে যেতে হয় না। তৃষাট বাঁ দিকের ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকালো৷ এখান থেকেই স্পষ্টই বুঝতে পারছে যে দরজাটা খানিকটা খোলা। ভেতরে অন্ধকার। অর্থ্যাৎ ভেতরে কেউ নেই।
তাহলে অপু গেল কোথায় এই রাতের বেলা? নিজের মনের কাছেই একটু অস্থির লাগলো। এমন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে যে সময় অসময়ে অপুকে পাশে না পেলে কেমন অস্থির লাগে!
বেড সুইচটা জ্বালালো। একটু নড়ে অপুর বালিশের কাছে আসতেই অপুর ফোন দেখতে পেল। ফোন নিয়ে বের হয় নি। তার মানে ফোন দিয়ে কোন লাভ হবে না। নাম ধরে ডাক দিবে?
যখন এই কথা ভাবছে তখনই বসার ঘর থেকে একটু আওয়াজ শুনতে পেল৷ কেউ আছে সেখানে!
অপু কি টিভি দেখছে নাকি ফ্রিজ থেকে কিছু খেতে গেছে!তৃষা উঠে বসলো। তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল বসার ঘরের দিকে। ভেবেছিল একদম নিশ্চুপ ভাবেই যেতে পারবে কিন্তু সেটা সম্ভব হল না। ওর আওয়াজ ঠিকই পেয়ে গেল অপু। টিভিতে কিছু দেখছিলো। টের পেয়ে সাথে সাথেই বন্ধ করে দিল সেটা৷ ওর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
-আরে আরে তুমি উঠে এসেছো কেন? আমাকে ডাক দিলেই তো হত!
তৃষার চোখও টিভির দিকে৷ চোখ সরু করে বলল
-তুমি কি দেখছিলে টিভিতে?
অপু কোন মতে বলল
-আরে কিছুই না৷ আজকে লালিগার ফাইনাল তো তাই দেখবো ভাবছিলাম
তৃষার মনে এবার সন্দেহ জাগলো। অপু ঠিক খেলা দেখার মানুষ নয়। ঘুম কামাই করে তো খেলা দেখার মানুষই নয়। তার মানে নিশ্চয়ই লুকাচ্ছে।
তৃষাট এবার খানিকটা ঠান্ডা কন্ঠে বলল
-কি দেখছিলে সত্যি করে বল!অপু চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে ও কিছু লুকাচ্ছে তবে যখন তৃষা জানতে চেয়েছে সেটা ও লুকাতে পারবে না। বলতে ওকে হবেই। অপু খানিকটা কাঁচুমাচু করে বলল
-রাগ করবা না তো?
-রাগ করবো না। বল।অপু তবুও খানিকটা ইতস্ততভাবে এদিক ওদিক তাকালো। তারপর টিভির রিমোর্ট চেপে টিভি চালু করলো। তখনই তৃষাট অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো অপু যা দেখছিল সেটা কোন মুভি কিংবা খেলা নয়। ওর সনোগ্রাফির ভিডিও। সপ্তাহ খানেক আগে তৃষাকে নিয়ে অপু ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল রেগুলার চেকাপের জন্য৷ সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়েছিলো। বাচ্চার অবস্থা স্বাভাবিক। সেটার ভিডিও ডাক্তার দিয়ে দিয়েছিল।
তৃষার মন হঠাৎ সিক্ত হয়ে উঠলো। এই পাগল ছেলে সেই ভিডিও দেখছে একা একা।
তৃষাট অপুর দিকে তাকিয়ে বলল
-এই ভিডিও কবে থেকে দেখছো একা একা?
অপু আরও খানিকটা কাঁচুমাচু হয়ে বলল
-তিনদিন।
-একা একা তিনদিন দেখছো আমাকে ডাকো নি কেন?অপু কি বলবে খুজে পেল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। যেন খুব বড় কোন অপরাধ করে ফেলেছে।
তৃষাট ঘুরে গিয়ে সোফার উপর গিয়ে বসলো৷ অপু ওর পাশে বসতেই ওর কাধে মাথা হেলান দিলো। তারপর বলল
-এই রাতের বেলা একা একা আমাদের মেয়েকে দেখছো আর আমাকে ডাকছো না, এটা কি ঠিক?
অপু কথা বলল না। মাথা নাড়ালো সেটা বুঝতে পারলো।
তৃষা টিভির দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে। ওর ভেতরের প্রাণটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তৃষা টিভির থেকে চোখ সরিয়ে অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো। অপুর চোখ কেমন জ্বলজ্বল করছে৷ ওর চোখের পানি চিকচিক করছে৷
তৃষা বলল
-এবার থেকে একা একা দেখবে না আর, মনে থাকবে?
-আচ্ছা।
-আমরা দুজন এক সাথে দেখবো।দুজন তাকিয়ে রইলো টিভির দিকে। সনো গ্রাফের ভিডিওতে ওদের সামনের জীবনের স্বপ্নটার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে। সামনের জীবনের স্বপ্নটা আস্তে আস্তে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে৷
YOU ARE READING
তৃষার গল্প - সিজন টু
Short Storyতৃষার গল্পের প্রথম সিজনের প্রতিটি গল্পই সবার পড়া । তবে সেই গল্প গুলো এখন ড্রাফটে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে কোন দিন আবার পড়ার সুযোগ পাবেন কেউ । আপাতত তৃষার গল্পের দ্বিতীয় সিজন শুরু হচ্ছে । গল্প গুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে ফেলুন । হয়...