-আম্মু টক দই কোথায়? ওটা তো আনা হয় নি।
অপুর আম্মু মুখ ঘুরিয়ে তৃষার দিকে তাকালেন। এতো সময় তিনি বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন৷ তৃষার কথা শুনে তার মনযোগ রান্না ঘরের দিকে গেল৷
মেয়েটা সেই বিকেল থেকে রান্না ঘরে রান্না বান্নার কাজে ব্যস্ত। আজকে নাকি অপু আসবে!
সত্যিই কি আসবে?
আজকে ৬ বছর তার ছোট ছেলের কোন খোজ নেই। কোথায় আছে কেউ জানে না। ছয় বছর আগে তার ছেলে কাউকে কিছু না বলে গায়েব হয়ে যায়। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না। কি কারনে গেছে তাও কেউ বলতে পারে না।তারপর গত তিন বছর থেকে অপুর জন্মদিনে তৃষা নামের এই মেয়েটা এসে হাজির হয়৷ সারাদিন ধরে রান্না বান্না করে। তৃষার মনে একটা দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে এই জন্মদিনেই নাকি অপু ফিরে আসবে। তাই অপুর সব পছন্দের খাবার তৃষাট রান্না করে।
কিন্তু দুই বছরের প্রতিদিন বারই মেয়েটার অপেক্ষা করাটা কেবল বৃথাই গেছে। মেয়েটা রান্না শেষ করে কেবল অপেক্ষাই করেছে কিন্তু অপু আর আসে নি। আজও হয়তো আসবে না।অপুর আম্মু অয়নকে ডাক দিল। এই কয় বছরে অয়ন বেশ বড় হয়ে গেছে। সামনের বারই এসএসসি পরীক্ষা দিবে। অয়ন আবার কেন জানি তৃষাকে খুব পছন্দ করে। ওকে মিষ্টি আম্মু বলে ডাকে। এই পরিবারের সবাই অপুর ফিরে আসার অপেক্ষা করছে। সবাই প্রথম প্রথম বাইরে আওয়াজ পেলেই মনে করতো এই বুঝি অপু চলে এসেছে। সবাই দৌড়ে চলে যেত। তারপর আস্তে আস্তে সে সব কমে যায়। তারপরই একদিন তৃষা নামের মেয়েটা এসে হাজির। মেয়েটা আকুল হয়ে ফিরে আসার অপেক্ষা করে। নতুন করে আবার অপুর চলে যাওয়ার কষ্ট টা শেখ ভিলার সব মানুষ গুলো অনুভব করতে পারে৷
তৃষার মুখটা ক্ষণে ক্ষণেই ঘামে ভিজে যাচ্ছে৷ সেটা মোছার জন্য টিস্যু বক্স পাশেই রয়েছে৷ রান্নাঘরে যাওয়া অনেক আগেই যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। ওর কেবল মনে হত যে রান্না করে ও অপুকে খাওয়াতে পারবে না, সেই রান্না করে কি করবে?
কোন দিন বুঝতে পারে নি অপু নামের পাগল ছেলেটা এমন পাগলামি করতে পারে। কেবল কথার ছলেই একদিন বলেছিল যে ওকে পেতে হলে অপুকে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর এরই মধ্যে তার সাথে কোন যোগাযোগ করা যাবে না। যদি এর পরেও সে তাকে চায় তাহলেই বিয়ে হবে। এর আগে নয়। হিসাব করে বলল যে ছয় বছর পরে অপুর জন্মদিনে ওদের আবার দেখা হবে। সেই দিনের পরেই কেবল বিয়ে হতে পারে। এর আগে নয়।
সেই শর্তও অপু মেনে নিয়েছিল এক বাক্যেই। কেবল অনুরোধ করে বলেছিল যাতে যোগাযোগ না বন্ধ হয়। কিন্তু জেদি তৃষা সে কথায় কর্ণপাত করে নি। বেচারা ওকে কিভাবেই না অনুনয় বিনয় করেছিলো। কিন্তু তৃষাট সেই সব শোনে নি।তারপর একদিন হঠাৎ করেই অপুর কাছ থেকে মেসেজ আসা বন্ধ হয়ে গেল। এক সপ্তাহ পরে তৃষার ঠিকানাতে একটা চিঠি এসে হাজির। সেখানে কেবল কয়েকটা লাইন লেখা।
ঝুমঝুমি,
যে শহরে তোমার সাথে আমি কথা বলতে পারি না, তোমার সাথে দেখা করতে পারি না সে শহর আমার বড্ড অচেনা লাগে। তুমি যেমন চাও তেমন করেই তোমার কাছে ফিরে আসবো।
আমি সব কিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছি।তৃষাট সেই চিঠিতেও খুব বেশি গুরুত্ব দিল না। কিন্তু মাস খানেক পরে একদিন একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসে হাজির হল৷ ফোনটা ছিল অপুর আম্মুর। সেই দিনই সে জানতে পারলো অপুর খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। গত এক মাস ধরে ওর ফোন বন্ধ৷
তারপরই তৃষার অনুভব হল কিছুটা ঠিক হয় নি৷ সেই দিন থেকেই অপুর খোজ শুরু হল কিন্তু হায় অপুর খোজ পাওয়া গেল না কোথাও। তারপর দেখতে দেখতে এক দুই করে আজকে ছয় বছর হতে চলেছে। তৃষা কোন দিন ভাবেও পাগল ছেলেটা এমন একটা কাজ করে ফেলবে!
রান্না বান্না যখন শেষ হল তখন প্রায় রাত দশটা বেজে গেছে। গত কালই আসার আগে তৃষাট হাতে গাঢ় করে মেহেদী দিয়েছিল। অপুর এই হাতে মেহেদী দেওয়া খুব পছন্দের ছিল। মেহেদীর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময়৷ গতকাল দিলেও আজও রংটা বেশ গাঢ় রয়েছে। অপু দেখলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে।
বেশ সময় নিয়ে শাওয়ার নিল ও। তারপর অপুর পছন্দ করা সেই পোষাক টাই পরলো। এটা অপু নিজে ওকে কিনে দিয়েছিল।
তারপর সিড়ি ঘরে বসলো। এখান থেকেই রাস্তাটা দেখা যায়। বারোটা বাজলেই অপুর জন্মদিন। অবশ্য কাল সারা দিনে যে কোন সময় আসতে পারে ও। কিন্তু তৃষাট রিস্ক নিতে চায় না। ও চায় অপু যখন ফিরে আসবে তখন যেন সবার আগে তৃষাই ওকে দেখে।
তৃষাট অপেক্ষা করতেই থাকে। আজকে অপু আসবে। আজকে ওকে আসতেই হবে।
বারোটা বেজে গেছে। তৃষার বুকের ভেতরের উত্তেজনা হঠাৎ করে বেড়ে গেল। ওর কেবলই মনে হতে লাগলো এখনই অপু চলে আসবে। এখনই আসবে।
তখনই বাড়ির সামনে একটা গাড়ি থামার আওয়াজ হল।
কেউ নামছে।
তৃষাট আর দাড়ালো না। কেচি গেটটা খুলেই বের হয়ে এল। তারপর দৌড়াতে শুরু করলো রাস্তার দিকে। অন্ধকারের ভেতরের দেখা যাচ্ছে না যে গাড়ি থেকে কে নেমেছে কিন্তু তৃষা জানে গাড়ি থেকে নামা মানুষটা অপু ছাড়া আর কেউ হতে পারে না৷
ছয় বছর তৃষা অপেক্ষা করেছে৷ আর যেন একটা মিনিটও অপেক্ষা করতে রাজি নয়৷
তৃষা দৌড়াতে থাকে।
ঐতো অন্ধকারের ভেতরেও অয়বয়টা দেখা যাচ্ছে।
ছয় বছর পরে অপেক্ষা শেষ হতে চলেছে....
YOU ARE READING
তৃষার গল্প - সিজন টু
Short Storyতৃষার গল্পের প্রথম সিজনের প্রতিটি গল্পই সবার পড়া । তবে সেই গল্প গুলো এখন ড্রাফটে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে কোন দিন আবার পড়ার সুযোগ পাবেন কেউ । আপাতত তৃষার গল্পের দ্বিতীয় সিজন শুরু হচ্ছে । গল্প গুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে ফেলুন । হয়...