কিছু সময় আমি দিশেহারার মত এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। কোথায় যাবো কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। ঢোকার কথাও না। এই মেডিক্যালে আমি এই প্রথম এসেছি জীবনে। সারা জীবনে হাসপাতাল এড়িয়ে চলেছি। কিন্তু চাইলেই সব কিছু কি এড়িয়ে যাওয়া যায়?
-কি নেকু তানভীর, মন খারাপ?
পরিচিত কণ্ঠস্বর টা শুনে বুকে যেন একটু পানি এল। ঘুরে তৃষার দিকে তাকাতে ওর হাসিমুখটা দেখতে পেলাম। তৃষা আবার বলল, চিন্তা লাগছে?
-হুম।
-চিন্তা করে কি লাভ বল? আমাদের যা করার আমরা করব, আমাদের হাতে যা আছে তা করবো বাকিটা উপরওয়ালার হাতে।সত্যিই তাই। আমার আব্বাকে ঢাকাতে নিয়ে আসা হচ্ছে। ওখানকার ডাক্তারেরা তাকে আর সেখানে রাখতে ইচ্ছুক না। তাই তাকে এখানে আনা হচ্ছে। আমি আগে এসে পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করছি। কোথায় কি করতে হবে না হবে এইসব। কিন্তু এই জিনিস কি আমার কাজ? জীবনে এই কাজ করেছি!
তৃষা আমাকে ওর কেবিনে রেখে কাজে চলে গেল। একটা ওটি সামলাতে হবে। আর বলে গেল চিন্তা না করতে। ও যতটুকু পারে এদিকটা দেখবে।
ঘন্টা খানেক পরে আব্বা এসে হাজির হল হাসপাতালে। এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি চলল। তবে শেষ পর্যন্ত বেড ম্যানেজ করা গেল। ভর্তি করিয়ে ভাবছি কি করবো দেখলাম তৃষা আবারও এসে হাজির। আমি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার সাথেই রুমে ঢুকলো। তারপর আব্বার রিপোর্ট গুলো দেখতে লাগলো। ভাইয়া কিংবা আম্মু কেউই বুঝতে পারে নি যে তৃষা কেবল ডাক্তারই নয়, সে আমার পরিচিত।
তৃষার কথা অবশ্য আম্মু জানে কিন্তু সামনাসামনি কোনদিন তাদের দেখা হয় নি। তৃষাকে দেখলাম দাড়িয়ে কাকে যেন ফোন দিচ্ছে। তারপর একটা ধমকও দিতে দেখলাম।
আর কিছু পরে দেখি দুইজম ওয়ার্ডবয় এসে হাজির। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তৃষা বলল, ভাইয়া আঙ্কেলকে এই হুইল চেয়ারে বসান। আর জিনিস পত্র এদের হাতে দিন।
আমি কিছু বলতে যাবো আগে ভাইয়া বলল, কোথাত নিয়ে যাবেন?
তৃষা বলল, কেবিন ঠিক করা হয়েছে। ওখানে নিয়ে চলুন।
ভাইয়া বলল, কিন্তু ওরা যে বলল কেবিন সকালের আগে পাওয়া যাবে না।
তৃষা একটু বিরক্ত নিয়ে ওয়ার্ডবয়দের দিকে তাকালো। তবে কিছু বলল না।
এই পুরোটুকু সময়ে আমি একটা কথাও বলি জি। চুপচাপ ছিলাম। আব্বুকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হল। এটা আলাদা কেবিন। পরে বুঝলাম সাধারন রোগীদের এই কেবিন দেওয়া হয় না। কেবল মাত্র ডাক্তারদের আত্মীয় স্বজনদের জন্য এই কেবিন বরাদ্দ।
দেখলাম কিছু সময় পরেই দুজন ডাক্তার এসে হাজির। তৃষাই তাদের ডেকে নিয়ে এল। তারা আব্বুকে পরীক্ষা করলো বেশ কিছু সময় ধরে। এরপর টেস্টের জন্য রক্ত নিল। আরও কি কি যেন করলো।আমার মা সম্ভবত কিছু বুঝতে পেরেছিলেন। আমাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, এই কি তৃষা?
বললাম, হ্যা।
তাকে দেখলাম বেশ খুশিই হতে।রাতে তৃষার ডিউটি নেই। তবুও ও রয়েই গেল। কিছু পরপর উকি দিচ্ছিলো কেবিনে। এক সময় বের হয়ে যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করলো। আমাকে বাইরে বের হতে বলছে। অবশ্য এখানে আর খুব একটা কিছু করার নেই। এখন রিপোর্ট আসবে তারপর পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমি ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। তৃষা বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কি নেকু তানভীর? এখানও মন খারাপ? চিন্তা কর না তো! দেখবা কিচ্ছু হবে না।
কিছু বললাম না আমি। এমনই যেন হয়।তৃষা আমার হাত ধরলো। তৃষার এই হাত ধরাটা আমি জানি। আমি যখন কোন ব্যাপার নিয়ে অস্থির বোধ করি তখন ও আমাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য আমার হাত ধরে, সবার সামনেই ধরে। ও খুব ভাল করেই জানে আমি যত অস্থিরই হই না কেন, তৃষা যখন আমার হাত ধরে কিংবা আমাকে জড়িয়ে ধরে তখন আমার মন শান্ত হয়ে আসে।
আজও তাই এল। জানিনা রিপোর্ট এ কি আসবে তবে যাই আসুক সেটা সামাল দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমরা আর আমি জানি আমি যে বিপদেই পড়ি না কেন তৃষা সব সময়ই আমার হাত এই ভাবে ধরে থাকবে।
YOU ARE READING
তৃষার গল্প - সিজন টু
Short Storyতৃষার গল্পের প্রথম সিজনের প্রতিটি গল্পই সবার পড়া । তবে সেই গল্প গুলো এখন ড্রাফটে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে কোন দিন আবার পড়ার সুযোগ পাবেন কেউ । আপাতত তৃষার গল্পের দ্বিতীয় সিজন শুরু হচ্ছে । গল্প গুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে ফেলুন । হয়...