প্লাজো

931 27 3
                                    

কলিং বেলা বাজতেই আমার মুখে একটা মুচকি হাসি দেখা দিল । অনেক দিন পর আজকে একটা সুযোগ এসেছে । আজকে ঠিকঠাক মত কাজটা করতে পারলেই ঐ জিনিসটা আমার বাসা থেকে দুর হবে ! তখন আমার সুন্দর বউকে আরও সুন্দর লাগবে আমার চোখে !

শোবার ঘর থেকেই আমি দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম । তারপর বেশ কিছু চিৎকার চেঁচামিচি । আমি এখনও বুঝতে পারলাম না মেয়েরা যখন একে অন্যকে অনেক দিন পরে দেখে তখন এরকম চিৎকার চেঁচামিচি করে কেন ওঠে ? একে অন্যকে জড়িয়ে ধর আনন্দে । সেটা সমস্যা নেই কিন্তু এভাবে চিৎকার বাসা মাথায় তোলার দরকার কি ?

যাক এই ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই । আমি অনেক্ষা করতে লাগলাম । একটু পরেই জানি তৃষা রুমে আসবে । আমাকে ডেকে নিয়ে যাবে ওর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য । তৃষার বেশ কিছু বন্ধু আজকে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসছে । এর ভেতরে অনেকেই আমাকে আগে দেখে নি । তাদের আজকে আমার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে । এই জন্য আজকের এই আয়োজন !

আমি কয়েক মিনিট পরেই তৃষার আওয়াজ পেলাম । ও আমার নাম ধরে ডাকছে । আস্তে আস্তে আওয়াজটা কাছে এগিয়ে আসছে বুঝতে পারছি । একটু পরেই দরজা খুলে তৃষা ঘরের ভেতরে ঢুকলো । আমি তখনও বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছি । তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-চল ওরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ।

-চল !

এই বলেই আমি খাট থেকে চট করে নেমে পড়লাম । আমি জানতাম তৃষা আমার দাড়িয়ে পড়া দেখে খানিকটা চমকে যাবে । গেলও তাই । আমার দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল

-এটা কি পরেছো তুমি ?

আমি মুকচি হেসে বললাম

-কেন ? চমৎকার না ?

-মানে ? তুমি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছো ?

-কেন ইয়ার্কী কেন মারবো ? তুমি বলেছো প্লাজো তোমার খুব পছন্দের পোশাক । যা তোমার পছন্দ তাই আমার পছন্দ । তাই আজকে আমিও একটা পরে ফেললাম ।

একটু পরেই তৃষার মুখটা লাল হতে দেখলাম । বুঝতেই পারছি সে রেগে যাচ্ছে । আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল

-এখনই বদলাও বলছি । নয়তো ভাল হবে না বলছি !

-আমি অবশ্যই বদলাবো । তবে যদি আজকে আমাকে এই জিনিস না পরতে দাও তাহলে এই পোশাক তুমিও আর পরতে পারবে না ।

-দেখো ....

-আচ্ছা বাদ দাও । চল তোমার বন্ধুদের সাথে দেখা করে আসি !

আমি এই বলে দরজার দিকে হাটা দিলাম । মনে মনে খানিকটা সন্দেহ ছিল তৃষা হয়তো আমাকে নাও আটকাতে পারে । ও যেমন মেয়ে হয়তো এই অবস্থাতেই আমাকে ওদের সামনে নিয়ে যাবে । তখন অবশ্য কেলেঙ্কারির এক শেষ হয়ে যাবে । তবুও আমি থামলাম না । আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম । কিন্তু যখন দরকার কাছে পৌছালাম তখন মনে হল সর্বনাশ তৃষা হয়তো আমাকে সত্যিই আটকাবে না । তখন কি হবে ?

যা হবার হবে !

পরাজয়ে ডরে না বীর ।

যে কাজ হাতে নিয়েছি সেটা শেষ করতেই হবে !

মান সম্মান গেলে আমার একার যাবে না, ওরও যাবে !

তবে সেটা শেষ রক্ষা হয়ে গেল । তৃষা আমাকে আটকালো ।

আমি বললাম

-কথা দাও যে এই বাসায় তুমি আর কোন দিন প্লাজো পরবে না !

-আচ্ছা বাবা আচ্ছা । এখন এটা বদলাও প্লিজ !

-সত্যিই তো !

ব্যাপারটা আসলে অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে । মেয়েদের কোন পোশাকেই আমার ঠিক কোন সমস্যা নেই । তবে প্লাজোটা আমার একদম সহ্য হয় না । মনে হয় যেন লুঙ্গিকে মাঝখান দিয়ে সেলাই করে পরেছে । আবার তৃষা আমাকে লুঙ্গি পরতে দেয় না । এই নিয়ে বেশ ফাইট হয়ে গেছে আমাদের মাঝে । এবং যথারীতি আমি পরাজিত হয়েছি । বাসায় কোন লুঙ্গি নেই । এদিকে ওকে যখন প্লাজো পরতে মানা করলাম তখন এমন একটা ভাব করলো যেন এর থেকে হাসির কথা আর শুনেই নি । আবারও আরেক দফা ফাইট হয়ে গেল এবং এবারও স্বাভাবিক ভাবেই আমিই পরাজিত হলাম ।


কিন্তু এবার একটা কাজের কাজ হয়েছে । তৃষা যখন একবার বলেছে যে আর পরবে না তখন আর পরবে না ! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য খানে । এর শোধ তো সে ঠিকই তুলবে । তার মানে আমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে । তা হোক । আপাতত আমি আমার এই সম্প্রতি বিজয় উপভোগ করতে থাকি । পোশাক বদলে দরজা দিয়ে বের হয়ে এলাম ! পরেরটা পরে দেখা যাবে !

তৃষার গল্প - সিজন টুWhere stories live. Discover now