কান্নাকনি

799 26 3
                                    

আমাদের বাসার একদম কোনার দিকে একটা ব্যালকনি আছে । পরিবারে অনেক গুলো ছেলে মেয়ে থাকলে যেমন একটা কি দুইটার দিকে একদম লক্ষ্য দেওয়া হয় না । চোখের আড়ালে রয়ে যায়, এই ব্যালকনির অবস্থা হয়েছে ঠিক সেই রকম । একটা নির্দিষ্ট সময় ছাড়া এখানে আসাই হয় না ।

আমি এই ব্যালকনির একটা নাম দিয়েছি আমি । কান্নাকনি ! তৃষা এই ব্যালকনী টা ব্যবহার করে কান্নাকাটি করার জন্য । আজকেও সে এখানে এসে হাজির । আমি ব্যালকনির দরজাতে এসে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । কত সময় ধরে এখানে আছে কে জানে ! সামনে দিকে মুখ করে রেখেছে । মাঝে মাঝে ওর শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে । কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ।

আমি দরজায় দাড়িয়ে থেকে বললাম

-তুমি কি কানো আসে পাশে সবাই আমাকে নারী নির্যাতন কারী স্বামী ভাবে !

তৃষা আমার কথা শুনে ফিরে তাকালো না । অন্য দিকেই তাকিয়েই রইলো । আমি ওর পাশে গিয়ে বসালম । তারপর বললাম

-এই যে আমাদের প্রতিবেশি তারা মনে করে আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তারপর তুমি এখানে এসে কান্না কর । কিন্তু বল আমি কোন দিন তোমার সাথে উচু গলাতে কথা বলেছি । বরং তুমি তো চিৎকার .....

লাইনটা শেষ হওয়ার আগে তৃষা আমার দিকে ফিরে তাকালো । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরে কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো । যতই চেষ্টা করি যে কিছুতেই ওর চোখে পানি আনবো না তবুও কিছু না কিছু করেই ফেলি ।

আজকের ঘটনা যে এভাবে ঘটে যাবে আমি বুঝতেই পারি নি । দুপুর বেলা পানি খেতে গিয়ে কিভাবে যেন হাতের ধাক্কা লেগে কাঁচের জগটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেল । সারা মেঝেতে পানি আর কাঁচের ছড়াছড়ি । আমি কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলাম সেদিকে । কি করবো বুঝতে পারলাম না তারপর মনে হল এটা পরিস্কার করেই ফেলা দরকার । যদিও তৃষা এটা দেখলে আমাকে কিছুটা সময় বকাবকি করবে । তারপর নিজেই পরিস্কার করতে শুরু করবে । বকা শোনার আগেই বরং আমি নিজেই পরিস্কার করে ফেলি ।

কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো সব পরিস্কার করতে গিয়ে । কাঁচে লেগে আমার হাত কেঁটে গেল । একটু আগে তো পানি আর কাঁচে ভর্তি ছিল এখন সেই সাথে যুক্ত হল আমার রক্তে । আর তখনই তৃষা ঘরে এসে ঢুকলো । কয়েক মুহুর্ত লাগলো বুঝতে । তারপর আমার উপর মোটামুটি ঝড় বইয়ে দিল ।

হ্যা আমার কথা কেন শুনবা তুমি ! আমি কে ? আমাকে ভালবাসো তুমি ?

আমি বলি এক আর উনি করে আরেক !

একটা কথা যদি শোনে একবার !

কিন্তু না !

উনি তো নিজের মত চলবে !

একটু যদি কেয়ার করে আমার কথা !

আমি তো কেউ না !

আমি কেন হব !

তারপর নিজেই আমার হাতের ক্ষত স্থানটা পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল । আমি মাঝে আরেকবার পরিস্কার করতে গেলে আবারও আরেক দফা বকা শুনতে হল । ও নিজেই সব পরিস্কার করে তারপর হাজির হল কান্নাকনীতে ।

প্রতিবারই এমন হয় । আমি কোন না কোন ভুল করি সে তখন আমাকে বকা দেয় কিন্তু যখন সেই ভুলের ফলে আমার কোন ক্ষতি হয় যেমন আমার শরীর খারাপ হয়ে যায় কিংবা আজকের মত কোন ক্ষত সৃষ্টি হয় শরীরে তখন বকা পরেই তৃষা এখানে চলে আসে । নিরবে কান্না করতে থাকে । তৃষার কাছে পরো পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাক কিন্তু তার কাছের মানুষ গুলোর শরীরে একটা আচড় লাগলেও আর রক্ষা নেই ।

তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । আমি আর কিছু বলতে পারলাম না । ওর চোখের দিকে আমার পক্ষে আর কিছু বলা সম্ভব না । কেবল ওকে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে । এটা আমি আগেও দেখেছি, ওর মন কিংবা মেজাজ যতই খারাপ থাকুক না কেন আমি যদি ওকে ঠিক মত জড়িয়ে ধরে থাকি তাহলে ওর মন ভাল হয়ে যাবেই ।

কতটা সময়ই জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম জানি না একটা সময় ওর কন্ঠ শুনতে পেলাম ।

-আর কত জড়িয়ে ধরে রাখবে ?

বুঝতে পারলাম মহারানী খানিকটা শান্ত হয়ে এসেছে । ওকে নিজের থেকে মুক্ত করে বললাম

-এমন কেন কর শুনি ? সামান্য একটুই কেটেছে ।

তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-তোমার শরীর থেকে কেটেছে ! তুমি জানো না তুমি আমার কাছে কি ! জানো না ?

আমি তাকিয়ে থাকি কেবল তৃষার দিকে । আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । বুকের ভেতরে এক অদ্ভুদ অনুভুতি হয় বারবার !

এতো ভালবাসা আমার ভাগ্যে ছিল !

আমি আরেকবার তৃষাকে জড়িয়ে ধরলাম । এই কান্নাকনিতে আমাদের এরকম ভালবাসার কত শত অনুভূতি আমি অনুভূব করেছি । সামনে না আরও কত করবো । জীবনে এতো সুন্দর কেবল তৃষার জন্যই ! 

তৃষার গল্প - সিজন টুWhere stories live. Discover now