শিরটান

841 38 1
                                    

তৃষার চোখে পানি চলে এসেছে । কিন্তু এতো গুলো মানুষের সামনে চোখ দিয়ে পানি বের হলে লজ্জার সীমা থাকবে না । অন্যদিকে যার জন্য কান্না আসছে সেই পরে এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে !

তৃষা নিজের চোখের পানি সামলে অপুকে বলল

-এখনও ব্যাথা করছে ?

অপু এখনও চোখ বন্ধ করে আছে । মুখটা ব্যাথায় একটু একটু কাঁপছে ! কিভাবে সহ্য করছে কে জানে ?

-এই ! এই !

-হুম !

-খুব কষ্ট হচ্ছে ?

মাত্র তিন টা শব্দ বলতেই তৃষার গলা ধরে এল । নিজের চোখের পানির আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করলো আবারও !

অপুর এই এক সমস্যা । দিনের মধ্যে অন্ত দশ বারো বারো রগে টান পড়বে ! তৃষা জানতো মানুষের কেবল পায়ের রগে রান পড়ে । কিন্তু অপুর হাত পায়ের রগে তো টান পরেই সাথে সাথে শরীরের অন্যান্য সব জাগয়ার শিরা উপশিরা সব জায়গা টান পরে । স্বাভাবিকের থেকে একটু এদিক ওদিকে নড়া চড়া করলেই হয় আর কোথায় যাবে !

এতো দিন তৃষা কেবল শুনে এসেছে । আজকে নিজের চোখে অপুর ব্যাথা অনুভব করতে দেখলো ! তৃষা কিছুতেই অপুর এই ব্যাথা পাওয়া সহ্য হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে যেন ব্যাথা টা ও নিজে অনুভব করছে ।

আরও মিনিট পনের পরে অপু খানিকটা স্বাভাবিক হল । ওর মুখে ততক্ষনে ঘাম জমে গেছে । তৃষা টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিল !

-এখন কি অবস্থা ?

-এখন ঠিক আছে । চল যাওয়া যাক !

-উঠতে পারবে ? ধরবো ?

-আরে না । সমস্যা নেই আপাতত । চল !

রিক্সা নেওয়ার পরে অপু পুরিপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেল । ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে একটু আগেও ব্যাথায় ওর মুখ টা নীল হয়ে ছিল । কথা বলছে, হাসছে, তৃষাকে হাসানোর চেষ্টা করছে ।

কিন্তু তৃষা এখনও স্বাভাবিক হতে পারে নি । এখনও ওর চোখের সামনে বারবার অপুর ব্যাথা মিশ্রিত মুখটা ভেসে ভেসে আসছে । এখনও কান্না আটকাতে ওকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে !

হঠাৎ অপু তৃষার হাত ধরে বলল

-তোমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, তাই না ?

-হুম !

-তোমার চোখের পানির আটকানোর চেষ্টা দেখে আমার হাসি চলে আসছিল । না পারছিলাম হাসতে না পারছিলাম কিছু বলতে । এতোটা ছেলে মানুষ কেন তুমি ?

তৃষা কোন কথা না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । ততক্ষনে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে !

অপু বলল

-বোকা মেয়ে, এভাবে ভালবাসতে আছে ? আমি তোমার এই ভালবাসার ঋণ কিভাবে শোধ করবো বল ? তাকাও আমার দিকে । তাকাও !

তৃষা অপুর দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো ! ওর চোখ দিয়ে তখন এক ভাবে পানি পড়ছেই । অপু তৃষার চোখ মোছার চেষ্টাও করলো না !

এতোক্ষন কান্না আটকানোর চেষ্টা করে মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । কাঁদুক একটু !

ও কেবল তৃষার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু খেল ! আর হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো !

তৃষার গল্প - সিজন টুWhere stories live. Discover now