রাস্তার মাঝে এইরকম দৃশ্যের জন্য কেউই তৈরি ছিল না; পথচারীরা তো নয়ই। অনেকে অনেক উপদেশ দিতে দিতে চলে গেলেন, যদিও সোনালির কিছুতেই কিছু আসে যায় না। সোনালি এতই স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক যে তাকে সব মানিয়ে যায়, তার জন্য নিয়ম কানুনের ফর্দ আলাদা। জাগতিক বিচার বুদ্ধির সীমিত ক্ষেত্রে সোনালিকে বুঝতে চেষ্টা করলে ভুল হয়ে যাবে। নির্বাণ নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে, সোনালির হাত দুটো ধরে ওকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করছে। সোনালির কাজল টানা চোখ দুটো জলে ভরে গেছে, একটু পরেই ফোঁটা ফোঁটা হয়ে ঝরে পড়বে, তাতে সাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করে নির্বাণ পকেট থেকে রুমাল বার করে সোনালির হাতে দিলো। সোনালিও অসম্ভব নৈপুণ্যের সাথে চোখের জল শুষে নেওয়ায় অহেতুক বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেল। দুজনেই ধীর গতিতে আবার হাঁটতে শুরু করল।
লিন্ডসে স্ট্রীটে একটা রেস্টুরেন্টের দোতলায় দুজনে মুখোমুখি বসলো। নির্বাণ মনে মনে ঠিক এইরকম পরিবেশ কল্পনা করছিল যাতে দু'জনে নিরিবিলিতে বসে কথা বলতে পারে। রেস্টুরেন্ট ফাঁকাই বলা যায়, ওরা ছাড়া আর একটা টেবিলে দুটো ছেলেমেয়ে গল্প করছে, বাকী চারটে টেবিল খালি। সোনালি ব্যাগ টেবিলে রেখে ওয়াশরুমে গেল। নিজেকে একবার আয়নায় দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করছিল। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই, নিজের চোখে চোখ পড়তেই দুষ্টু হাসির ঢেউ খেলে গেল সোনালির নরম মিষ্টি ঠোঁটের মাঝে। মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে নির্বাণকে জড়িয়ে ধরতে কোন জড়তা ছিল না, কিন্তু একা নিজের মুখোমুখি হতেই লজ্জায় লাল। মানুষের মন বোঝা দায়। নিজেকে বোঝাল - একদিন না একদিন এটা হবার ছিল, আজ হয়ে গেল।
নির্বাণের ঠিক বিপরীতে নিজের চেয়ার টেনে বসতেই আবার হাসি। এবার নির্বাণও যোগ দিল, সোনালির হাসি নিঃসন্দেহে নির্বাণকে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। হাত দুটো সোনালির দিকে বাড়িয়ে বলল, "এখন ভালো লাগছে?"
সোনালি নির্বাণের দু-হাতের তালুতে চুমু খেয়ে মুঠো বন্ধ করে দিলো, নিজেকে নির্বাণের কাছে স্বেচ্ছাবন্দী করে রাখল। তৃপ্তিতে ভরপুর হয়ে বলল, "ভীষণ ভালো লাগছে।"
![](https://img.wattpad.com/cover/157510615-288-k332721.jpg)